হ্যা আছে,কিডনি শরীর থেকে রক্তে দূষিত পদার্থ পরিষ্কার করার পাশাপাশি আরো অনেক কাজ করে থাকে যার মধ্যে হাড্ডির স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক পরিমান মিনারেলস,ভিটামিন(যেমন:ক্যালসিয়াম,ফসফরাস,ভিটামিন ডি ) রক্তে ধরে বা ব্যালান্স করে রাখাটা অন্যতম, যখন ক্রনিক কিডনি রোগী আস্তে আস্তে স্টেজ অনুযায়ী কিডনি ফেইলুর এর দিকে আগাতে থাকে তখন কিডনী আর এই মিনারেলগুলো ঠিকমতো ব্যালান্স করতে পারেনা তাই কিডনি রোগে বন বা মিনারেল ডিজঅর্ডার/সমস্যা স্বাভাবিক এবং হয়ে থাকে বা ভবিষ্যতেও ভুগতে পারেন।
উত্তর :- ক্যালসিয়াম,ফসফরাস,ভিটামিন ডি/একটিভ ফর্ম অফ ভিটামিন ডি(calcitrol)এবং প্যারাথাইরয়েড/parathyroid(PTH) হরমোন.
উত্তর:-আপনার যখন কিডনী ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে তখন আপনি যে খাবারগুলো খান তার ভিতর ফসফরাস থাকে যা দুর্বল কিডনী শরীর থেকে সঠিক পরিমান বের করতে পারেনা যা শরীরে জমা হতে থাকে যা ক্ষতিকর.
আবার সুস্থ কিডনি খাবার বা রোদের আলো থেকে যে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় তা একটিভ ফর্ম অফ ভিটামিন ডি তে(যাকে calcitrol বলা হয়)রূপান্তর করে যা ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সয়াহতা করে হাড্ডির স্বাস্থ্যের জন্য এবং একই সাথে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মধ্যে ব্যালান্স করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যখন কিডনি ডেমেজ বা ক্ষতিগ্রস্থ হয় তখন একটিভ ফর্ম অফ ভিটামিন ডি উৎপন্ন না করতে পারার জন্য সাপ্লাই শরীরে কম পরে যা হাড্ডির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে.
আপনার রক্তে যখন ফসফরাস বেশি থাকে এবং ভিটামিন ডি কম থাকে,কিডনি ডেমেজ হওয়ার কারণে আপনার parathyroid গ্লান্ড প্রচুর পরিমান Parathyroid (pth) হরমোন উৎপন্ন করে (যাকে সেকেন্ডারি Hyperthyroidism বলে,যদিও Hyperthyroidism এর আরো বেশ কিছু কারণ আছে) যা ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মধ্যে সঠিকভাবে ভাবে ব্যালান্স করতে বাধা দেয়,আবার হাই বা বেশি parathyroid হরমোন এবং হাই ফসফরাস হাড্ডি থেকে ক্যালসিয়াম বের করে রক্তে নিয়ে আসে এবং হাড্ডিতে ক্যালসিয়ামের অভাব তৈরী করে যা আপনার হাড্ডি দুর্বল করতে থাকে এবং আপনি হাড্ডির রোগের দিকে অগ্রসর হতে থাকে বা ভবিষ্যতে ভুগতে পারেন/ভোগা শুরু করেন যেমন অস্টিওপরোসিস,অস্টিওআর্থরায়টিস,হাড্ডির/মিনারেল ডেন্সিটি কমে যাওয়া ইত্যাদি আসলে এগুলো পুরো একটি সিস্টেম যা একটার সাথে আরেক সম্পৃক্ত. আবার এটাও সঠিক যে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বা যারা পোস্টমেনোপজ ওমেন (যাদের বয়সের সাথে সাথে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়) তাদের এই মিনারেল ডেফিসিয়েন্সি/হাড়ের রোগগুলো কম বেশি হয় বা প্রকাশ পেতে থাকে প্রকৃতিগত কারণেও।
উত্তর: হ্যা হতে পাড়ে, ক্রনিক কিডনি রোগে রোগী সাধারণত অনেকদিন ভুগে ট্রান্সপ্লান্ট এ আসে তাই আগে থেকে হাড়ের রোগের সিম্পটম না থাকলেও একটা এফেক্ট থাকে বা হাড়ের রোগ নিয়েও অনেকে ট্রান্সপ্লান্ট এ যান এবং আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ট্রান্সপ্লান্ট পরবর্তী ইম্মুনোসাপ্রেসিভ খাওয়া শুরু করতে হয় (বিশেষ করে স্টেরয়েড) যা রিজেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং ট্রান্সপ্লান্ট কিডনীর লংজিভিটি বা স্থায়িত্ব বাড়াতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ▪️আবার অনেক সময় ক্রনিক কিডনি রোগেও(CKD) ইউরিনে প্রোটিন কমানোর জন্যও স্টেরোয়েড ব্যবহার করা হয়ে থাকে কিন্তু এর কিছু ক্ষতিকর পার্শপ্রতিক্রিয়া রয়েছে স্টেরয়েড আস্তে আস্তে বা অনেক সময় ধরে আপনার হাড়ের উপর নেগেটিভ ইফেক্ট ফেলে বা ক্ষয় হতে সাহায্য করে যা বেশ কয়েকবছর পর ধরা পরে বা সমস্যা হওয়া শুরু করে আর যাদের আগে থেকে হাড়ের রোগ ছিল তাদের ক্ষতির পরিমান আরো বেশি হয় বা হতে পারে।
আবার অনেকে ওল্ড স্টেজ এ ট্রান্সপ্লান্ট এ যান তাদের বয়সের কারণে বা সিকেডির প্রভাবে এমনি হাড়ের রোগ থাকতে পারে বা মহিলাদের পোস্টমেনোপজে ওমেন (যাদের বয়সের সাথে সাথে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়) তাদের এই মিনারেল ডেফিসিয়েন্সি হয়ে থাকে তার উপর ট্রান্সপ্লান্ট মেডিসিন শুরু করতে হয়,তাই ট্রান্সপ্লান্ট পরবর্তী সবাইকে হাড়ের বা মিনারেল ডেফিসিয়েন্সির ব্যাপারে বিষয়গুলোতে এলার্ট থাকা জরুরি.
উত্তর:- টেস্ট,টেস্ট হচ্ছে জানার উপায়.আপনি যখন কিডনি রোগে বা ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত হবেন তখন থেকেই যে ভিটামিন/মিনারেলগুলো বললাম সেগুলো এবং আরো কিছু টেস্ট আছে যা করলে প্রতিরোধ বা সতর্ক থাকা যায় যা নিচে আলোচনা করা হলো :-
🔷️ফসফরাস/phosphorus ব্লাড লেভেল টেস্ট: রক্তে ফসফরাস টেস্ট করলে জানতে পারবেন যে আপনার ফসফরাসের অবস্থা কি.কিডনি রোগে ফসফরাস রক্তে সাধারণত বেশি থাকে যেহেতু ক্ষতিগ্রস্থ কিডনি ফসফরাস বের করতে পারে না এবং কিডনি যত বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে ফসফরাস রক্তে সাধারণত বেশি হতে থাকে তাই কিডনি রোগে আপনার dietecian ফসফরাস জাতীয় খাবার কম খেতে বলে/এভোয়েড করতে বলে.যখন ফসফরাস জাতীয় খাবার কম খেয়েও নিয়ন্ত্রণে আসেনা তখন ফসফেট নিয়ন্ত্রনের ওষুধ দেয় যা ফসফেট বাইন্ডার নামে পরিচিত যেমন: ক্যালসিয়াম ভিত্তিক ফসফেট বাইন্ডার calcium acetate আবার এই সাপ্লিমেন্ট যদি ক্যালসিয়াম বাড়িয়ে দেয় তাহলে ক্যালসিয়াম এবং এলুমিনিয়াম ফ্রি ফসফেট বাইন্ডার যেমন selevamer carbonate(Renvela ব্র্যান্ড নামে পরিচিত ) ইত্যাদি, এগুলো আপনার ব্লাড প্যারামিটার দেখে নেফ্রোলজিস্ট ঠিক করবে কি পরিমাণ মাত্রায় খেতে হবে.ডায়ালাইসিস চিকিৎসাও ফসফরাস কমায়.
উত্তর:- ডেইরি বা দুগ্ধ জাতীয় সকল খাবার যেমন:( পনির,মাখন,ঘি,দুধ,ছানার মিষ্টি,ঘোল,চকলেট মিল্ক,দই,পুডিং,পায়েস ইত্যাদি),অর্গান মিট/রেড মিট,সামুদ্রিক মাছ,বাদাম,ডিমের কুসুম,সোডা/কার্বনেট বেভারেজ,চকলেট,প্রসেসড প্যাকেট ফুড ইত্যাদি.
🔷️ ক্যালসিয়াম/Calcium ব্লাড লেভেল টেস্ট :-
ব্লাড ক্যালসিয়াম লেভেল টেস্ট এর মাধ্যমে আপনার রক্তে ক্যালসিয়াম লেভেল কম না বেশি আপনি তা জানতে পারবেন এবং আপনার রক্তে ক্যালসিয়াম লেভেল চেক করে সে অনুযায়ি নেফ্রোলজিস্ট ব্যবস্থা নিবেন,যদি দেখে ব্লাড ক্যালসিয়াম কম আছে তাহলে বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ড নামে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায় তা আপনাকে সাজেস্ট করবেন বা calcium level বেশি পেলেও যদি ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট আগে থেকে খান তা এডজাস্ট বা বন্ধ করে দিবেন।
🔷️PTH/parathyroid Hormone Blood test:-
PTH ব্লাড টেস্ট এর মাধ্যমে আপনার parathyroid হরমোন এর মাত্রা বুঝতে পারবেন যা ক্রনিক কিডনি রোগে বেশি থাকে এবং স্টেজ আনুযায়ী যত সামনের দিকে বা এন্ড স্টেজে যেতে থাকবেন parathyroid হরমোন আপনার ব্লাডে সাধারণত ততো বেশি মাত্রায় পাবেন.এই হরমোন নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাক্তার একটিভ ফর্ম অফ ভিটামিন ডি (calcitrol) দিয়ে নিয়ন্ত্রণ বা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে থাকে এছাড়াও cinacalcet নামের ওষুধও ব্যবহার করতে পারে.এগুলো ওষুধে কন্ট্রোল/নিয়ন্ত্রণ নাহলে ডাক্তার parathyroid গ্লান্ড সার্জারির মাধ্যমেও রিমুভ করতে পারে।
🔷️ Vitamin D level Blood test-
ভিটামিন ডি ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে নেফ্রোলজিস্ট/ডাক্তার আপনার ভিটামিন ডি এর মাত্রা বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী ডাক্তার আপনাকে ভিটামিন ডি(Cholecalciferol/calcitrol etc) সাপ্লিমেন্ট খেতে দিবেন যা আপনার ভিটামিন ডি চাহিদাও পূরণ করবে এবং কিডনি রোগে Parathyroid Hormone নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে,কোন ফর্মেশনের ভিটামিন ডি খাবেন বা আপনার জন্য উপকারী তা আপনার নেফ্রোলজিস্ট ডিসিশন নিবেন।
🔷️Bone Mineral Density Test/DEXA/DXA SCAN/XRAY- এই টেস্টগুলো রেডিওগ্রাফি বা হাই রেজুলেশন রেডিওগ্রাফি টেস্ট যা আপনার *হাড্ডির এরিয়াতে কি পরিমান ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য মিনারেলস জমা আছে বা *অস্টিওপরোসিস কতখানি হয়েছে বা *ভবিষ্যৎ হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু বা *অস্টিওপরোসিস হয়ে গেলে তা নিরুপনের জন্য বা *হাড্ডির ঘনত্ব কতটুকু কমলো বা *অস্টিওপরোসিস চিকিৎসা দেওয়ার পর তা কাজ করছে কিনা তার জন্য এই টেস্ট গুলো দেওয়া হয় বা নেফ্রোলজিস্ট বা অর্থোপেডিক ডাক্তার বা সমন্বয় করে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন. 🌻 ট্রান্সপ্লান্ট এর পর সধারনত বিভিন্ন ধরণের ইম্মুনোসাপ্রেসিভ বিশেষ করে স্টেরয়েড দীর্ঘদিন ধরে খেতে হয় যা ধীরে ধীরে হাড়ের ক্ষয় করতে পারে বা করে তাই ট্রান্সপ্লান্ট এর পরেও এই টেস্ট করা উচিত এবং সে অনুযায়ি হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধের বিভিন্ন ওষুধ আছে (যেমন- Alendronate,Ibandronate acid,zolendronate acid etc) যা প্রত্যহ বা সপ্তাহে বা মাসে বা তিনমাসে ইত্যাদি ডোজে ডাক্তারের তত্ত্বাবধায়নে খেতে হতে পারে।
🔷️ Exercise/Physiotherapy :- বিভিন্ন ধরণের এক্সারসাইজ আপনার মাসেল এবং হাড় শক্ত করতে ভূমিকা রাখে তাই যাদের ব্যায়াম করতে নিষেধ নেই তারা সঠিক উপায়ে এক্সারসাইজ করা উচিত কারন কিডনি রোগীদের কঠিন ব্যায়াম করাও নিষেধ থাকে তাই ডাক্তারের পরামর্শে হালকা এক্সারসাইজ যেমন হাঁটা ,যোগ ব্যায়াম ইত্যাদি করা উচিত. মনে রাখতে হবে যাদের অলরেডি হাড়ের রোগ হয়ে গিয়েছে তাদের এক্সারসাইজ হিতে বিপরীত ঘটাতে পারে.আরেকটা বিষয় যাদের অস্টিওপরোসিস/অস্টিওআর্থারায়টিস ডেভেলপ হয়ে গেছে তাদের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে বা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাই নেফ্রোলজিস্ট বা অর্থোপেডিক বা ফিজিওথেরাপিস্ট এর সমন্বয় চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিন কারণ কিডনি রোগীদের ব্যথার ওষুধের ব্যাপারে রেস্ট্রিকশন্স থাকে।
উত্তর:-হাঁ,এই মিনারেলসগুলো যেমন ফসফরাস,ক্যালসিয়াম ইত্যাদি যখন রক্তে অতিরিক্ত থাকে তখন আপনার রক্তনালী/হার্টে জমা হতে পারে যা হার্টের রিদম থেকে শুরু করে হার্ট এটাক/স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরী করতে পারে তাই কিডনি রোগীদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং টেস্ট করে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
✔⭕✔ পরিশেষে বলতে হয় যারা কিডনি রোগী তাদের হাড়ের/মিনারেল ডিজিজ বা রোগ সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
ⒸBKPA.
BKPA is a voluntary social organization whose mission is to raise awareness, promote and share knowledge about kidney disease. BKPA does not provide any kind of medical advice directly or indirectly through social media or any other platform which should only be done by the nephrologist or registered doctor. This is prohibited to take any kind of medical treatment based on the information provided by BKPA.
বিকেপিএ একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন যার লক্ষ্য কিডনি রোগ সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি,প্রচার এবং সতর্ক করা। বিকেপিএতে সামাজিক মাধ্যম অথবা অন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করে বা সরাসরি প্রত্যক্ষ / পরোক্ষভাবে কোনো প্রকার চিকিৎসা সংক্রান্ত সেবা বা পরামর্শ প্রদান করা হয় না যা শুধুমাত্র আপনার নেফ্রোলজিস্ট এবং রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের এখতিয়ার।বিকেপিএ প্রদত্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোন প্রকার চিকিৎসা গ্রহণ নিষিদ্ধ।