কিডনি রোগীদের লাইফ লাইন ফিস্টুলার ব্যবহারবিধি এবং পরিচর্যা/ Fistula Care

post-image

কিডনি রোগীদের লাইফ লাইন ফিস্টুলার ব্যবহারবিধি এবং পরিচর্যা -———-[ছবি নিচে সংযুক্ত]

একটা ন্যাচারাল বা নরমাল ফিস্টুলা হল একটা ন্যাচারাল গাছের মতো। একটা গাছ লাগানোর পর দুই মাসে গাছটা যত বড় হবে, শক্তিশালী হবে, চার মাসে তা আরো বেশি শক্তিশালী হবে, ছয় মাসে আরো বেশি বড় হবে এবং শক্তিশালী হবে। সেরকম একটা ন্যাচারাল ফিস্টুলাকে রেডি হতে যত বেশি সময় দেওয়া যাবে তত বেশি রেডি হবে আর যত বেশি রেডি হবে তত বেশি পরিপক্ক হবে আর যত বেশি পরিপক্ক হবে এর স্থায়িত্ব তত বাড়বে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের বইতে ফিস্টুলা রেডি হতে সাধারণত আট সপ্তাহ সময়ের কথা বলে এবং সময়টা অ্যাভারেজ টাইম কিন্তু অবশ্যই এই সময়টা রোগী ভেবে ভিন্ন হবে কারণ একেক জনের শারীরিক গঠন এক এক রকম। একটা ফিস্টুলা রেডি হওয়া এবং ব্যবহারের পরিপূর্ণ গাইডলাইন সংশ্লিষ্ট অপারেটিং সার্জনের বলে দেয়া উচিত। বাংলাদেশে সব সময় শর্ট টার্ম (ফিমোরাল এবং যুগুলার) ক্যাথেটার চালু ছিল যা সাধারণত এক থেকে দেড় মাস যেতো অথচ উন্নত বিশ্বে পার্মানেন্ট ক্যাথেটার সবচেয়ে বেশি প্রচলিত যা ন্যূনতম ছয় মাস যায়, যে ক্যাথেটার আমি ২০০৮ সালে বাংলাদেশে সর্ব প্রথম শুরু করি এবং তখন থেকেই সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে শেখাচ্ছি যার ধারাবাহিকতায় পুরো বাংলাদেশে অনেক চিকিৎসকই প্রথম এক্সেস হিসেবে পার্মানেন্ট ক্যাথেটার প্র্যাকটিস করছেন। যদি নরমাল ক্যাথেটার দিয়েই ফিস্টুলা রেডি করা যেত তাহলে বিদেশে পার্মানেন্ট ক্যাথেটার কেন আবিষ্কার হয়েছে?? পারমানেন্ট ক্যাথেটার বিদেশে এইজন্য সবচেয়ে বেশি প্রচলিত কারণ ফিস্টুলা রেডি হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে এই ক্যাথেটারের কোন বিকল্প নেই। অথচ এই ফিস্টুলা যদি অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর আগে করা থাকতো তাহলে রেডিমেট এই ফিস্টুলা দিয়ে রোগীরা ডায়ালাইসিস করতে পারত তখন অন্য কোন ক্যাথেটার লাগতো না। কিন্তু বাংলাদেশে ৯৯ ভাগ রোগীকে বলার পরও তারা সময়মতো ফিস্টুলা করে না। ফলশ্রুতিতে তাদের প্রথমে ক্যাথেটার করতে হয় এবং পরবর্তীতে ফিস্টুলা করতে হয় এবং বহুক্ষেত্রে অনেকবারই অপারেশন করতে হয়।

💥ফিস্টুলা কখন ব্যবহার করতে হবে?? -————————————————– কেউ একজন বলল আর ফিস্টুলা দেড় দুই মাসে রেডি হয়ে গেল ব্যাপারটা এমন না। ফিস্টুলা রেডি হওয়ার মেডিকেল কিছু নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া আছে যেমন রক্তনালী মোটা হতে হবে এবং রক্তনালীর পুরুত্ব বাড়তে হবে। আবার রক্তনালী গুলো দৃশ্যমান হতে হবে যাতে ডায়ালাইসিস টেকনিশিয়ানরা সহজে প্রিক বা নিডলিং করতে পারে।

💥ফিস্টুলা কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?? ফিস্টুলা কিভাবে নিডলিং করতে হয়?? -—————————————————- একটা পরিপূর্ণ রেডি ফিস্টুলার ক্ষেত্রে অনেকগুলো রক্তনালী রেডি থাকে। ফলে ডায়ালাইসিস টেকনিশিয়ান সহজে দুটো পয়েন্ট অর্থাৎ আটারিয়াল পয়েন্ট এবং ভেনাস পয়েন্ট বের করতে পারে। ফোর আর্ম ফিস্টুলার ক্ষেত্রে ট্রিটমেন্ট লেন্থ পুরো হাতই থাকে কিন্তু এলবো অথবা ব্রাকিয়াল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে এই ট্রিটমেন্ট লেন্থ অর্ধেক হয়ে যায় যেখানে নিডলিং করা আসলেই অনেক কঠিন কারণ জায়গা কম থাকে।

ফিস্টুলা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যেখানে অপারেশন করা হয়েছে অর্থাৎ এনাষ্ট্রমোসিস করা হয়েছে সেখানে রক্ত প্রবাহ সবচেয়ে বেশি থাকে। এই অপারেশনের জায়গা থেকে যত দূরে পারা যায় তত দূরে ব্যবহার করতে হবে যাতে রক্ত প্রবাহতে কোন বাধা তৈরি না হয় এবং রক্ত প্রবাহের পুরো চাপটা দূরের রক্ত নালিতে প্রবাহিত হতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ডায়ালাইসিস টেকনিশিয়ান গুলো এই অপারেশনের জায়গার কাছাকাছি এসে ব্যবহার করা শুরু করে কারণ এখানেই রক্ত প্রবাহ সবচেয়ে ভালো পাওয়া যায় এবং সহজে নিডলিং করা যায়। ফলশ্রুতিতে সবচেয়ে বেশি রক্ত প্রবাহের কাছাকাছি ফিস্টুলার দুটো পয়েন্ট বারবার ব্যবহার করার ফলে জায়গাগুলো বেলুনের মতো ফুলে যায় কিন্তু ভিতরের দিকে ব্যবহারের জায়গা গুলো সংকুচিত হয়ে যায় এবং ফিস্টুলার রক্ত চাপ এই সংকুচিত সেগমেন্ট আর প্রসারিত করে দূরের রক্তনালীতে যেতে পারে না। ফলশ্রুতিতে রক্তনালীর ব্যবহারযোগ্য সেগমেন্ট কমে যায়।

ফিস্টুলা কখনোই দুইটা পয়েন্টে ব্যবহার সীমিত রাখা উচিত না। প্রতিবার নতুন নতুন পয়েন্ট ব্যবহার করা উচিত যাতে আগের ব্যবহার করা জায়গা গুলো শুকাতে পারে। অপারেশনের জায়গা থেকে যত দূরে ব্যবহার করা যায় তত ভালো এবং পুরো লেন্থ ব্যবহার করা উচিত যাতে শুধুমাত্র কয়েকটা পয়েন্ট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে শুধুমাত্র দুইটা পয়েন্টেই সবাই ফিস্টুলা ব্যবহার করে যার ফলশ্রুতিতে ওই দুইটা পয়েন্টের রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে এবং পরবর্তীতে ফিস্টুলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

💥ফিস্টুলার পরিচর্যা -————————- ফিস্টুলা অপারেশন করার প্রথম এক মাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম এক মাস ফিস্টুলার অপারেশন পরবর্তী জটিলতা গুলো সবচেয়ে বেশি হয়। পরবর্তীতে যত সময় যাবে অপারেশন পরবর্তী জটিলতার পরিমাণ তত কমে যাবে। ডায়ালাইসিস করে একজন মানুষ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। তাই একমাস পরে রোগীগুলো ফিস্টুলা হাতে স্বাভাবিক সব কিছুই করতে পারে কিন্তু রক্ত প্রবাহে বাঁধা হয় শুধুমাত্র এই কাজগুলো করা উচিত না। বর্তমানের ট্রান্সপ্লান্টের রেজাল্ট তো খুবই ভালো। যারা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করেন তাদের ফিস্টুলা অবশ্যই বন্ধ করতে বলা হয় না কারণ ন্যাচারাল ফিস্টুলা রোগীর স্বাভাবিক জীবন যাপনে কোন অসুবিধা তৈরি করে না। তবে ট্রান্সপ্লান্টেট কিডনির অপারেশন পরবর্তী কোন অপ্রত্যাশিত সমস্যায় রোগীর আগের কার্যকরী ফিস্টুলাটা বিপদে কাজে আসতে পারে। ট্রান্সপ্লান্টের পরে যদি ফিস্টুলাতে অপ্রত্যাশিত কোন জটিলতা তৈরি হয় যা রোগীর জন্য কষ্টকর অথবা বিশেষ করে এলবো বা ব্রাকিয়াল ফিস্টুলা অত্যধিক ফুলে যায় অথবা দৃষ্টিকটু ভাবে পরিবর্তন হয় কেবল তখনই ফিস্টুলাটা বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে। অন্যথায় ট্রান্সপ্লান্টের পর কার্যকরী ফিস্টুলায় হাত দেওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। আর ফোরআর্ম ফিস্টুলার ক্ষেত্রে রোগীদের কসমেটিক ইফেক্ট তো অনেক ভালো হয়।

Dr Mohammad Shafiul Azam Department of Urology National Institute of Kidney Diseases And Urology (NIKDU) Sher E Bangla Nagar Dhaka Bangladesh