কিডনি রোগ/হতাশা/ বিষন্নতা /সোশ্যাল স্টিগমা/মনের ডাক্তার

post-image

কিডনি রোগ/হতাশা/ বিষন্নতা /সোশ্যাল স্টিগমা/মনের ডাক্তার.

কিডনি রোগে বা রোগীদের ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ/শুধু রোগী না সবার ক্ষেত্রেই কম বেশি প্রযোজ্য এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিডনি রোগে মানসিক রোগের চিকিৎসকের ভূমিকা ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যতটা নেফ্রোলজিস্ট এর ভূমিকা রয়েছে যেহেতু কিডনী রোগ অধিকাংশক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ি হয় কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যা সর্বোপরী অবহেলিত।

🔷️ কিডনি রোগীদের মধ্যে গুটিকয়েক ছাড়া তেমন কেও মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে চাননা,অনেকে তো মানসিক বা মনের ডাক্তার এর রুমে ঢোকার আগেই ডানে বামে তাকায় কেও দেখলো নাকি,পাগল ভাবলোনাতো?পুড়ো জীবন মানুষ কি ভাবছে না ভাবছে এগুলো ভাবতে ভাবতেই শেষ।

হিমালয় যে জয় করেছে যদি ভাবেন তার শুধু শারীরিক শক্তি আছে তাহলে দুনিয়ার সব বডি বিল্ডাররাই বা কুস্তিগীর হিমালয় জয় করতো অথচ প্রচন্ড শারীরিক শক্তির পাশাপাশি মানসিক শক্তি দিয়ে কিভাবে সারভাইব করতে হবে ওনারা ভালো করেই জানে। মনে রাখবেন,আপনাকেও এই রোগকে মেনে নিতে হবে এবং মানসিক ভাবে মোকাবেলা বা সারভাইব করতে হবে মানে করতেই হবে,এর কোনো বিকল্প নেই।

🔷️ একটু বলে নেই সাইক্রিয়াট্রিস্ট আর সাইকোলোজিস্ট এর ভিতর পার্থক্য আছে, সাইক্রিয়াট্রিস্ট হচ্ছে মেডিকাল ডাক্তার যারা মানসিক রোগ আইডেন্টিফাই করেন,ট্রিটমেন্ট প্লান নির্ধারণ করেন এবং ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা করেন আর সাইকোলজিস্ট মেডিকেল ডাক্তার না তারা মূলত কাজ করে থেরাপি নিয়ে যেমন সাইকোথেরাপি(টক্ থেরাপি/মটিভেশনাল থেরাপি/কাউন্সেলিং) ইত্যাদি,এগুলোও অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ভালো থাকতে সাহায্য করে এবং এদের বিভিন্ন কোর্সও আছে। পৃথিবীর ইতিহাস ঘাটলে দেখবেন এক স্পিচ/ ভাষণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে আবার কথার থেরাপি দিয়ে বা ব্রেইন ওয়াশ করেও অনেক বিধ্বংসী ঘটনা ঘটানো সম্ভব। অনেকসময় সাইকোলজিস্ট এবং সাইকোথেরাপিস্ট এর সম্মিলিত চিকিৎসা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো ফল নিয়ে আসে।

🔷️আমরা সবাই মানসিক প্রশান্তি চাই,শারীরিক সুস্থতাই যদি সব হতো তাহলে শারীরিক সুস্থ ব্যাক্তি বিষন্নতায় মরতে চাইতো না বা এক কথায় জীবনের উপসংহার টানতো না। নিজের কিডনি রোগ সম্পর্কে যখন সর্বপ্রথম কেও জানতে পারে তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে বুঝে যায় সময়ের সাথে সাথে তাকে সারাজীবন এই রোগ নিয়ে বয়ে বেড়াতে হবে এবং ধীরে ধীরে নিজের আসেপাশে যে পরিবর্তনগুলো খেয়াল করে তা নিজেকে সবার থেকে একা বা আলাদা করে তোলে তাই রাগ,ক্ষোভ,অভিমান, বিষন্নতা ,হতাশা সহো মানসিক রোগে ভোগাটা খুবই স্বাভাবিক।

🔷️ কিডনি রোগ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে যেমন: আর্থিক,শারীরিক,নিজের জীবনের স্বপ্ন,সম্পর্ক,ভবিষৎপ্ল্যান,বিয়ে,চাকরি,ব্যবসা,নিজেকে বোঝা মনে করা ইত্যাদি। আপনার সমাজব্যবস্থা/মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি প্রথমেই আপনাকে ক্যাটাগোরাইজড করে দুর্বল বানিয়ে ফেলবে বা চেষ্টা করবে প্রতিটি ক্ষেত্রে এক অজানা পর্দা আপনার সামনে ফেলে দিতে তাই এসব নেগেটিভ মানুষদের যতটুকু সম্ভব পারবেন এড়িয়ে চলবেন,এরা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরাজমান এবং এর ভিতরেও অল্প কিছু পজিটিভ মানুষও পেয়ে যাবেন যারা হবে আপনার বিপদের বন্ধু/প্রাণের বন্ধু বা soulmate ( ❤❤ ),এই গুটিকয়েক মানুষ নিয়েই কিন্তু একসাথে পুরোজীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়,বেশি লাগে না।

🔷️ ক্রনিক কিডনি রোগী,অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট বা যে ডায়ালাইসিস রোগীটি চারটা ঘন্টা ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন তিনি পুরাটা সময় বিষন্ন থাকাটা স্বাভাবিক কিন্তু এটাও জানা উচিত এই সংক্ষিপ্ত জীবনে প্রত্যেকেই কোননা কোনোভাবে যুদ্ধ করে টিকে আছে এবং ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার অধিকাংশই ভাবছে তাদের যুদ্ধই সবচেয়ে কঠিন এবং এটাও সঠিক কারণ কারো যুদ্ধের বা প্রেক্ষাপটের সাথে কারোটা মিলবে না বা তুলনা হয়না যেমন :একজন ট্রান্সজেন্ডার বা আমরা যাদের হিজড়া বলি তারা তাদের পুড়োটা জীবনজুড়ে সমাজে কি পরিমান প্রতিবন্ধকতার বা কষ্টের শিকার হন তা তারা নিজেরাই শুধু জানেন বা যে পিতামাতা অটিস্টিক শিশুকে বড়ো করছেন হাসিমুখে তাদের পরিশ্রম/কষ্ট তারাই শুধু উপলব্ধি করতে পারেন এমন আরো অসংখ উদহারণ আমাদের আশেপাশেই আছে বা পাবেন।

একটা সময় ছিল যখন যক্ষার কথা শুনলেই মানুষ ভয় পেতো,কলেরাতে গ্রামের পর গ্রাম শেষ হয়ে যেত আর এখন কঠিন রোগেরও আয়ুষ্কাল চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকায়নের ছোয়াতে সুস্থ মানুষের সমান সমান বা কাছাকাছি চলে গেছে।

আপনাকে নিজের বাস্তব প্রতিবন্ধকতা মেনে নিয়েই সামনের দিকে আগাতে হবে,চিকিৎসা নিতে হবে,ভালো থাকতে হবে একই সাথে সারাদিন বা প্রতিনিয়ত নিজের রোগ নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করতে হবে,অন্য কাজে মনোনিবেশ করতে হবে.

🔷️ ভবিষ্যতে কি হবে এই চিন্তায় বিষন্নতা,আতঙ্ক,ভয় প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে অথচ আপনার ভবিষ্যৎ খুব সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ করা আছে যা অবধারিত,পার্থক্য শুধু আপনি মৃত্যুর পূর্বে অযথাই বারবার মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন যা আপনার রোগ জানার আগে তা করতেন না। একটি শিশু যখন পৃথিবীতে আসে এবং বোধশক্তি হওয়ার পড় যখন সে জানতে পারে প্রকৃতিগত কারণেই তার মৃত্যু অবধারিত তখন মৃত্যুভয়ে যদি সে সারাদিন কান্নাকাটি করতে থাকে,আপনি কিন্তু তাকে ঠিকই পাগল ভাববেন বা বলবেন “চিল্লায়া লাভ আছে/ চিল্লায়া মার্কেট পাওন যাইবো”। মনে রাখবেন আপনি শুধু একা না পুরো পৃথিবীতে ৭০ কোটি লোক বিভিন্ন ধরণের কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং এই রোগের সাথে যুদ্ধ করছে। আপনার এই হতাশা/বিষন্নতার বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসতেই হবে বা ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হবে না কারণ হতাশা,বিষন্নতা আপনার কিডনি রোগকে আরো বেশি ক্ষতির দিকে অগ্রসর করতে সাহায্য করে।

🌼 নিচের টিপসগুলি জানতে পারেন যা মনের সমস্যাগুলো দূর করতে সাহায্য করবে:-

❤ সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস,স্মরণ এবং তার প্রতি আনুগত্য আপনার জীবনে প্রশান্তি বয়ে নিয়ে আসবেই তাই বিষন্নতা/হতাশা কাটাতে তার ইবাদত/ধ্যান জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

❤ নেগেটিভ/নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিয়ে পজিটিভ হোন যা আপনার সুস্থতার জন্য ভীষণ ভাবে জরুরি। ওভারথিন্কিং বা ভবিষৎ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা বর্তমানকে তিলে তিলে শেষ করে দেয় এবং শুধু আপনি না আপনার আশেপাশের মানুষকেও আপনি ক্রমান্বয়ে এফেক্টেড করেন যা বন্ধ করে একসাথে মোকাবেলা করতে হবে।সামাজিক হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ,নিজেকে কুক্ষিগত না করে পরিবারকে পজিটিভ ভাবে সময় দিন।

❤ মানসিক কষ্ট,দুশ্চিন্তা এবং হতাশাগুলো দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ে আসতে পারেন অর্থাৎ যখন দেখছেন প্রতিনিয়ত একই জিনিস মাথায় ঘুরে পাক খাচ্ছে বা চিন্তা করাচ্ছে তখন ঐ সুনির্দিষ্ট চিন্তা/হতাশা দিনের শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ে সীমাবদ্ধ বা আটকানোর ব্যবস্থা বা চেষ্টা করতে পারেন যেমন ধরুন বিকাল ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত আমি আমার হতাশাগুলো নিয়ে চিন্তা এবং পরিত্রানের বিষয় নিয়ে ভাববো বা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো আর বাকি সময়গুলোতে আমি ঐ বিষয় অথবা ইস্যু মনের ভিতর আনবোনা বা কালকের ওই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রেখে দিবো।

❤ আমাদের জীবনকে স্বাস্থ্যকর ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য সঠিক সময়ে এবং মাত্রায় ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিজস্ব কিছু একটিভিটি থাকে। সারা দিন কাজ করার পর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর বিশ্রামের দরকার হয়। ঘুম হচ্ছে অঙ্গপ্রঙ্গগুলোকে সঠিক ভাবে বিশ্রামের করে দেওয়ার উপায়। ঘুমের প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করা যাবেনা:-

*ঘুম শরীরে হিলিং প্রসেস করে এবং আপনার সমস্ত অর্গানকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

*পরিমিত ঘুম শরীরের পুরা অর্গান,নার্ভ ইত্যাদির রিল্যাক্সাসনের মাধ্যমে ডিটক্সিফাই করে।

*সঠিকমাত্রায় ঘুম আপনার মস্তিষ্কের প্রধান চালিকাশক্তি যেখান থেকে পুরো শরীর নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ আসে এবং রিল্যাক্সাসনের মূল মন্ত্র।

*ঘুমের নির্দিষ্ট সময় আছে,গ্রামের মানুষগুলোকে দেখবেন যারা রাত ৯ টা বা সর্বোচ্চ ১০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে একদম ভোরে উঠে এবং তাদের সুস্থতার মূল কারণ হচ্ছে ঘুম, ঘুমের মাধ্যমে যে হিলিং প্রসেস হয় তা সাধারণত মধ্য বা গভীর রাত্রে হয় অর্থাৎ ১২ টা থেকে শুরু হয় যেসময় আমরা অধিকাংশ জেগে থাকি তাই আর্লি ঘুমানোর কোনো বিকল্প নেই ।

❤ প্রত্যহ এক্সারসাইজ যেমন হাঁটা,ব্রেথিং এক্সারসাইজ,যোগ ব্যায়াম এছাড়াও পরিবার পরিজন এবং বন্ধুদের সাথে আড্ডা,মন খুলে হাসা,ঘুরতে যাওয়া ডিপ্রেশন কাটাতে এবং জীবনকে উপভোগ করতে খুবই সয়াহক।

❤নিজ কাজে মনোযোগী হোন এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনবাবস্থায় মনোনিবেশ করুন,খুঁজে বের করুন কোন পজিটিভ কাজগুলো আপনাকে আনন্দ বা রিলাক্স করতে সাহায্য করে,সেগুলো করুন।

❤Psychiatrist/psychologist এর শরণাপন্ন হোন এবং তাদেরকে আপনার সমস্যার কথা খুলে বলুন। মনে রাখবেন,তারা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং চিকিৎসাপ্রদানে অভ্যস্থ তাদের কাছে চিকিৎসাব্যবস্থা আছে যা আপনাকে অনেকটাই ভালো থাকতে সাহায্য করবে। নিজের কিডনী রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য নেওয়া এবং নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াও মানসিক শক্তির সয়াহক হিসেবে কাজ করে।

❤ চ্যারিটি বা দাতব্যমূলক বা অন্যের উপকার হয় এমন ধরণের সামাজিক কাজে নিজেকে সাধ্যমতো সংশ্লিষ্ট করুন যা মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখে এবং হতাশা কাটাতে ভীষণ উপকারী.নিজের এবং অন্যের ভালোকাজগুলোকে এপ্রেশিয়েট করুন।

❤নিজের সমস্যাগুলো খাতায় লিখতে পারেন এবং উপায়গুলো আইডেন্টিফাই করে সেগুলোও লিখুন এবং অগ্রাধিকার দিয়ে বাবস্থা গ্রহন করুন।

❤ কথা বলুন তার সাথে যিনি আপনার কথাগুলো শুনবে, বুঝবে এবং জাজমেন্টাল না।অনেকের সাথেই কথা বললেই বলবে/বলে তোমার এটা করা উচিৎ ছিল বা ওটা করা উচিত ছিল এরকম কাওকে না বলে আপনার সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং ক্রমানুসারে ধীরে ধীরে সল্যুশন এর চেষ্টা করবে এমন কাওকে খুঁজে বের করুন।

সুস্থ থাকুন….❤

ⒸBKPA

Writer - MD.ABUL BASHAR Siddique (shohag)

Caution:
BKPA is a voluntary social organization whose mission is to raise awareness, promote and share knowledge about kidney disease. BKPA does not provide any kind of medical advice directly or indirectly through social media or any other platform which should only be done by the nephrologist or registered doctor. This is prohibited to take any kind of medical treatment based on the information provided by BKPA.
সতর্কতাঃ
বিকেপিএ একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন যার লক্ষ্য কিডনি রোগ সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি,প্রচার এবং সতর্ক করা। বিকেপিএতে সামাজিক মাধ্যম অথবা অন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করে বা সরাসরি প্রত্যক্ষ / পরোক্ষভাবে কোনো প্রকার চিকিৎসা সংক্রান্ত সেবা বা পরামর্শ প্রদান করা হয় না যা শুধুমাত্র আপনার নেফ্রোলজিস্ট এবং রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের এখতিয়ার।বিকেপিএ প্রদত্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোন প্রকার চিকিৎসা গ্রহণ নিষিদ্ধ।