Lipid Profile/লিপিড প্রোফাইল টেস্ট হচ্ছে কয়েকটি টেস্ট এর সমন্বয়ে রক্তের একটি পরীক্ষা যা আপনার শরীরের রক্তের চর্বি নির্ধারণ করে আপনার করোনারি হার্ট রোগের সম্ভাব্য ভবিষৎ রিস্ক এমনকি বর্তমান হার্ট রোগের পরিধি বোঝাতে সাহায্য করে। প্রধানত হার্ট রোগের পরিধি বা সম্ভাব্য রিস্ক বুঝালেও রক্তে লিপিড বেশির ক্ষতির পরিধি মোটামুটি বিশাল। কিডনি ,হার্ট ,লিভার আপনার ব্লাড প্রেশার ,স্ট্রোক এর ঝুঁকি ইত্যাদি প্রধান অঙ্গ গুলোকে পরোক্ষভাবে ক্ষতি করার পিছনে এর ভূমিকা অনেক বেশি।
লিপিড প্রোফাইল টেস্ট এ মূলত রক্তের দুই জাতীয় চর্বি দেখা হয় এটাই মূলত মাথায় রাখেন আর তা হচ্ছে -
Cholesterol/কলেস্টেরল এবং Triglyceride ট্রাইগ্লিসারাইড।
💥কোলেস্টেরল/cholesterol-
এই কোলেস্টেরল এর মধ্যে আবার দুইটা ভাগ আছে একটা ভাগ ভালো কলেস্টেরল অর্থাৎ ভালো চর্বি যা HDL নামে পরিচিত আরেকটা অংশ খারাপ cholesterol যা LDL নামে পরিচিত।
🔹HDL (high density lipoprotein) - এই চর্বি হচ্ছে আপনার ভালো চর্বি যা আপনার রক্তে অন্যান্য খারাপ ফরমেশন এর চর্বিকে রক্ত থেকে বের করতে সহায়তা করে। HDL লেভেল হাই থাকলে বুঝবেন আপনার হার্ট এর রোগের রিস্ক লো বা কম। অলিভ অয়েল,বিভিন্ন সামুদ্রিক ফিশ,ওজন কমানো,এক্সারসাইজ,OMEGA 3 Fishoil, হোল গ্রেইন ফাইবার ফুড, এভোইড স্মোকিং & জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি HDL বা গুড কলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে.তবে ক্রনিক কিডনি রোগীদের প্রোটিন যেহেতু রেস্ট্রিকশন থাকে তাই সামুদ্রিক মাছ সাবধানে খাওয়া উচিত আবার বাজারে ওমেগা ৩ সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায় নেফ্রোলজিস্ট এর পরামর্শে ওটাও খেতে পারেন এবং কিছু রিসার্চ/জার্নাল বলে Omega 3 ইউরিনে proteinurea কমাতে আর রক্তে HDL বাড়াতে সাহায্য করে.
🔹LDL (low density lipoprotein)- এই জাতীয় কোলেস্টেরল কে খারাপ কলেস্টেরল বলে যা রক্তে চর্বি জমাতে সহায়তা করে এবং এই চর্বি গুলো আপনার হার্ট এর বিভিন্ন ধমনীতে জমা হয় যা আপনাকে হৃদরোগ ,হার্ট এটাক ,স্ট্রোক ,High ব্লাড প্রেশার ইত্যাদির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
🔹Total cholesterol level- মূলত HDL এবং LDL এর পরিমান যোগ করে টোটাল কোলেস্টেরল লেভেল নির্ণয় করা হয় মূলত l এছাড়াও আরো কিছু লিপিড কম্পোনেন্ট ও যোগ করা হয় তবে আপনারা দুইটার যোগ ফলই মাথায় রাখেন।
🔹Cholesterol Ratio- টোটাল কলেস্টেরল লেভেল কে HDL দিয়ে বা ভালো কলেস্টেরল দিয়ে ভাগ করে রেশিও বের করা হয় যেমন আপনার টোটাল cholesterol 200 হলে HDL 50 হলে আপনার রেসিও হবে 4:1,রেশিও বেশি মানে রিস্ক হাই।
💥 Triglycerides/ট্রাইগ্লিসারাইড - এটাও এক ধরণের চর্বি আমরা যে খাবার খাই প্রতিনিয়ত ক্যালোরির জন্য ,এই ক্যালোরির ভিতর থেকে যা শরীরে প্রয়জন হয় না সেটাই ট্রাইগ্লিসেরাইড এ রূপান্তর হয়ে যায়।এই ট্রাইগ্লিসেরাইড শরীরের ফ্যাট সেল এ জমা থাকে। আপনি প্রতিদিন অতিরিক্ত ক্যালোরি যদি খান কিন্তু সেটা যদি বার্ন বা ধ্বংস না করেন তাহলে ট্রাইগ্লিসেরাইড শরীরে জমা হতে থাকবে মূলত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন ভাত ,রুটি ইত্যাদি থেকেই এই ট্রাইগ্লিসেরাইড বেশি উৎপন্ন হয়।
♣️ আরেকটি কথাও মনে রাখতে হবে চর্বির যে এতো দুর্নাম করছি কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে শরীর এর শক্তি এবং চলার জন্যও কিন্তু চর্বির প্রয়জন পরে কিন্তু সেটা প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত হলে খবর আছে।
মূলশত্রু কে? - অল্প অতিরিক্ত carbohydrate জাতীয় খাবার ভাত ,রুটি আলু ইত্যাদি এবং রান্না ঘরে যে তেল এর বোতল আছে সেটা চরম ক্ষতিকর।
♣️ Important Reading- রান্নাঘরে যেখানে রান্না হয়, কিছুদিন পর পর দেখবেন চুলার আশপাশে তেলের প্রলেপ জমা হয় যা আমরা অনেক সময় তেলকাষ্টা বলে থাকি এবং যা কিছুদিন পর পর সাবান দিয়ে ডলাডলির পর পরিষ্কার হয়। ওখানে কিন্তু তেল দেওয়াও হয় না কিন্তু তেলের ভাব যেটা রান্না থেকে বের হয় ওতেই তেলকাষ্টা হয়ে যায়। এরকম ভাবেই আমরা যে তেল খাই এগুলা হার্ট এর ধমনীতে তেলকাষ্টা হয়ে আস্তে আস্তে ব্লক তৈরী করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় এখন ওখানেতো আর লেবুর শক্তিগুন সমৃদ্ধ ভীম দিয়ে ডলাডলি করে পরিষ্কার করার উপায় নাই তাই চিকিৎসা পদ্ধতিতে যাওয়ার আগে এগুলা এভোয়েড করা সবচেয়ে উত্তম।🌈
🙋♂️ প্রশ্ন -কোন তেল ভালো ?
উত্তর -পৃথিবীর কোনো তেলই সাধারণত ভালো না সেটা যে নামেই হোক। হাতে নিলে দেখবেন শুধু পানি দিয়ে যায় না ,সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হয় তার মানে হলো হার্ট এর ধমনীতে এভাবে জমা হবে ,উঠবে না। খাবারে এক চামচ তেল দিতে পারেন যাতে পুড়ে না যায় আর প্রতিটা খাবারে ন্যাচারাল তেল থাকেই এটাও মনে রাখবেন ।
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এবং ফিশ অয়েল/OMEGA 3 (যা ঘন্ধের কারণে রান্নায় ব্যবহার সম্ভব না, তবে ক্যাপসুল ফরমেটে পাওয়া যায় ) ভালো যা খেতে পারেন কারণ এগুলাতে মনোস্যাচুরেটেড ভালো ফ্যাট থাকে যা এন্টিইনফ্লামেটরি বা প্রদাহ কমাতে সয়াহতা করে। অনেক জার্নাল অলিভ অয়েল এর তেল কে তেল বলেন না জুস বলে ।
🙋♂️লিপিড কি ক্ষতি করে ?
-এর ক্ষতির পরিমান আনলিমিটেড /হাই ব্লাড প্রেশার ,হার্ট এটাক ,স্ট্রোক ,ফ্যাটি লিভার ,কিডনি রোগ ,ব্লাড সুগার ,ইউরিনে প্রোটিন ও বেশি যেতে থাকে যদি এটা কন্ট্রোল এ না রাখেন। এটা ধীরে ধীরে অনেক সময় নিয়ে আপনার ক্ষতি করবে কিন্তু যেদিন ক্ষতি করবে সেদিন একবারে জীবন নিয়ে টানাটানি বেঁধে যাবে তাই লিপিড মেইনটেইন করার কোনো বিকল্প নাই।
চিকিৎসা /হাই লিপিড থেকে বাঁচার উপায়
প্রথমে আপনাকে ব্লাড টেস্ট করে জানতে হবে আপনার লিপিড কি পরিমান বেশি।
⚡️খাবার কন্ট্রোল - প্রতিদিনের খাবারে তেল ,carbohydrate (ভাত ,রুটি ,আটা ময়দা দিয়ে তৈরী,বেকারি আইটেম )একবারে কমানো ,আলু ,লালমাংস ,অর্গান মিট ইত্যাদি বাদ দেওয়া ,বাদ দেওয়ার কথা বললে অনেকে কষ্ট পেতে পারেন তাই খুব খুব অল্প পরিমান খাওয়া। শাক,সবজি ফাইবার জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া ,Electrolytes চেক করে। তাই ডায়েটেশিয়ান এর কাছে যেয়ে খাদ্য তালিকা নির্ধারণ করে তা মেইনটেইন করা। খাবারে Healthy ফ্যাট যেমন olive oil ব্যবহার করা।
⚡️ওষুধ - অনেক সময় exercise বা খাদ্যাভ্যাসের জন্য বা আরো কিছু রোগে লিপিড স্বাভাবিক করার জন্য ওষুধের বিকল্প থাকে না। লিপিড কমানোর অনেক জনপ্রিয় ওষুধ এর গ্রুপ এর নাম হচ্ছে -statin/স্টাটিন যেমন :- Atarovastatin,Rosuvastatin ইত্যাদি। এগুলা ডাক্তার সাজেস্ট করতে পারে চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আরেকটা গ্রুপ আছে Fibrate গ্রুপ এর যেমন Fenofivrate কিন্তু এটার চেয়ে চিকিৎসকরা এখন statin গ্রুপ বেশি পছন্দ করে যদিও এটা চিকিৎসকের উপর ডিপেন্ড করে।
🌻রক্তে লিপিড এর নরমাল রেঞ্জ নিচে দেওয়া হলো যদিও ল্যাব থেকে ল্যাব রেঞ্জ পরিমাপের পয়েন্ট ভিন্ন হতে পারে তারপরেও একটা আইডিয়ার জন্য দেওয়া হলো।
🔸LDL: 70 to 130 mg/dL (the lower, the better)
🔹HDL: more than 40 to 60 mg/dL (the higher, the better)
🔸Total cholesterol: less than 200 mg/dL (the lower, the better)
🔹Triglycerides: 10 to 150 mg/dL (the lower, the better)
ধন্যবাদ।
সুস্থ থাকুন।
ⒸBKPA