কিডনি প্রতিস্থাপন গোমর ফাঁস

post-image

কিডনি প্রতিস্থাপন গোমর ফাঁস.

যারা পার্শবর্তী দেশে বা বিভিন্ন দেশে ডিস্ট্যান্ট রিলেটেড কিডনি প্রতিস্থাপন করতে যেতে চান বা যাবেন তাদের সতর্ক করার জন্য এই লেখা যেন তারা বিভিন্ন ফাঁদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন।

💥 বিষয় :- এজেন্ট💥

যারা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে যেতে চান বা যাবেন দেশের বাহিরে তাদের প্রথম প্রশ্ন মনে আসে কোথায় এবং কিভাবে যাবো??? আর এই সমস্যার জন্যই কিছু এজেন্ট সামনে হাজির হবে, এদের প্রথমে ভাব দেখলে মনে হবে এরা পারলে আপনার ট্রান্সপ্লান্ট খরচ দিয়ে দিবে কিন্তু আসলে এটা অনেক ক্ষেত্রে একধরণের চালাকি,বলছি না এরা সাহায্যকরি না কিন্তু অধিকাংশ এজেন্টদের সাহায্যের পাশাপাশি টার্গেট থাকে কিভাবে হাসপাতাল commission এর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত আপনার পকেট থেকে টাকা খসানো যায়। হাসপাতাল কমিশন নিবে ইহা স্বাভাবিক যেহেতু তাদের পরিশ্রম আছে কিন্তু এর পাশাপাশি বিভিন্ন সময় অনৈতিক ভাবে আপনার পকেট থেকে টাকা খসানোর চিন্তায় থাকে যা আপনার এই ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য অনেকটা মরার উপর খাড়ার ঘাঁ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

💥প্রথম ধান্দা💥

সবচেয়ে বড় ধান্দা Transplant বোর্ড এর পারমিশন এনে দিবে Agent এবং আপনাকে বলবে বাহিরের দেশের ট্রান্সপ্লান্ট বোর্ড আপনাকে প্রতিস্থাপনের পারমিশন দিতে চাচ্ছে না,তো এখন কি করতে হবে?? Transplant Permission অথরিটি অনেক বড় এমাউন্ট ঘুষ চাচ্ছে। ওই মুহূর্তে আপনি গিনিপিগ ছাড়া কিছু না,না পারবেন দেশে আসতে ,তখন দালাল কে বলবেন ভাই যেভাবে পারবেন ম্যানেজ করেন কারণ আপনি থাকবেন Dialysis ইউনিট এ আপনার অবস্থা খারাপ। তখন দালাল বলবে Board Permission এর জন্য বিদেশী অথোরিটি অনেক বড় এমাউন্ট ঘুষ চাচ্ছে তখন বলবেন কত? বলবে আপনার অবস্থা বুইঝা,যদি বোঝে আপনার খারাপ অবস্থা তাহলে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ আর যদি বোঝে অবস্থা ভালো তাহলে ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা।

ট্রান্সপ্লান্ট ২৫ লক্ষ লাগবে না ৩০ লক্ষ লাগবে এটা ডিপেন্ড করে অনেকাংশে এই খরচের উপর।

So Be Careful.

এর থেকে পরিত্রান এর উপায়-

১। এজেন্টদের সাথে ভালো ভাবে বলে নিন বোর্ড পারমিশন এর জন্য এক টাকাও দিবেন না বা দিতে হলে কত টাকা দিতে হবে তা আগেই বুঝে ক্লিয়ার করে নিন/লিখিত নিতে পারেন।

২। এজেন্টদের টার্গেট থাকবে কিভাবে আপনার কাছ থেকে টাকা খসাবে আসলে এই টাকার পুরাটাই যায় এজেন্টের পকেটে ,কিছু যায় হাসপাতাল এর এজেন্টদের পকেটে।

**পরিত্রান এর ব্যবস্থা-

********আপনার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ,জমি জিরাত বেচে আসছেন Transplant করতে বা দীর্ঘদিন চিকিৎসা করে আপনার অর্থ নেই বললেই চলে যা সত্য তা বলবেন এবং মানবিক দিক বোঝাবেন। ধনী হলেও বুঝাবেন না আপনি এতো টাকা নিয়ে আসছেন এতো ডলার নিয়ে আসছেন,আর পারলে Transplant এর আগে খুবই দরিদ্র অবস্থা এটা বোঝাবেন,ওরা আপনার সব কিছু Mark করে যেমন lifestyle দেখে বোর্ড permission এর কত টাকা আপনার কাছ থেকে খসানো যায় সেটা Decide করবে।

So Be Careful.

💥দ্বিতীয় ধান্দা💥

Documentation prepare বা প্রতিস্থাপন পূর্ববর্তী কাগজ পত্র তৈরী - Agent যে সব ক্ষেত্রে খারাপ তা কিন্তু নয় তারা আপনার প্রব্লেম নিজেদের কাঁধে তুলে নেবে কিছু টাকা লাভ করবে তাতে কোনো প্রব্লেম নেই কিন্তু লাভ যদি লোভে পরিনিত হয় তখনি আপত্তি।

***একটা কথা মনে রাখবেন এজেন্টের অফিস যত সুন্দর,যত স্মার্ট,Aircondition যত ঠান্ডা,যত দামি জায়গায় অফিস,ততো বেশি ধান্দাবাজি।

Documentation আপনি নিজে করলে সর্বোচ্চ লাগবে ৫ হাজার কমবেশি টাকা তবে আপনাকে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে সময় লাগবে এবং প্রথম হলে ঝামেলা মনে হবে।

আর এজেন্ট এই কাজগুলো রেগুলার করে,কিন্তু বড় এজেন্ট হলে এটাতে আপনাকে সাতপাঁচ বুঝাইয়া ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা চাবে।
আর সৎ এজেন্ট হলে চাবে ১০০০০ থেকে ২০০০০ টাকা,আপনাকে টাকার অঙ্ক বলে দিলাম। আপনাকে শিখাইয়া দিলাম, এজেন্টের সাথে কথা বলার সময় এমন ভাব দেখাবেন যে এই Rate আপনি অনেক আগে থেকেই জানেন। সব জায়গায় এই Rate ই চলে তখন আর ধান্দাবাজির সুযোগ পাবে না, না হলে অনেকের কাছে থেকে থেকে ৫০ থেকে ৮০ হাজার বা তার থেকেও বেশি টাকা নেওয়ার কথা জেনেছি।

💥তৃতীয় ধান্দা💥

বাসা ভাড়া-এজেন্টরা চাবে আপনাকে তাদের চুক্তির বাসা গুলাতে উঠাতে এবং এটাই সাধারণত হয়,সমস্যা হচ্ছে ওদের সাথে বাসার মালিকদের চুক্তি থাকে বা থাকতে পারে অনেক সময় ,আবার মালিকের কাছ থেকে বাসা ভাড়া নিয়ে তারা আসবাবপত্র দিয়ে আপনার কাছ থেকে তিন গুন্ টাকা নিবে,যেকোনো জায়গায় আসবাবপত্র সহ ভাড়া নিলে টাকা বেশি লাগবে এটাই স্বাভাবিক। এই টাকা থেকে আপনি কিছু সেভ করতে পারবেন যদি একটু আশেপাশে ঘোরেন এবং Main মালিক এর কাছ থেকে নিতে পারেন,ব্যাপার আসলে - যত বেশি হাত বদল তত টাকা লাগবে বেশি।

— পরিত্রান

তাদের সাথে কথা বলে নিন অথবা নিজে আসে পাশে ঘুরে মালিকদের সাথে কথা বলে বাসা ভাড়া নিন তাহলে টাকা কমাতে পারবেন।
**** আবার ওদের বাসা গুলাতে উঠলেও ওরা চাইতে পারে যাতে বোর্ড মিটিং পেতে দেরি হয় কারণ আপনি একমাস বেশি থাকলে তাদের আয় বেশি হবে।

হাসপাতালের আশেপাশে অনেকেই সাইনবোর্ড এ বাসা ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি পাবেন সেগুলোতে কল করে যেখানে কম সেখানে নিজে গিয়ে যোগাযোগ করে দামাদামি করলে আপনার খরচ কম হবে।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখবেন ডকুমেন্টস prepare করবেন বাংলাদেশে থাকতে থাকতেই এবং ট্রান্সপ্লান্ট এ যাওয়ার সময় এগুলো আপনি নিজেই নিজের লাগেজ এ করে নিয়ে যাবেন,যদি না নেন? তাহলে ওখানে গিয়ে ওরা দেখাতে পারে,আপনার এই ডকুমেন্টস নাই
ওই ডকুমেন্টস নাই,তখন ডিলে করাবে আর বলবে “মনে হয় এই মাসে মেডিকেল বোর্ড ধরতে পারছি না,এইতো এটার পর এই মাসে আরেকটা ডেট পড়বে”,Ultimately আগামী মাস পর্যন্ত আপনাকে টানার পসিবিলিটি আছে। একটা জিনিস মনে রাখবেন বা সত্য ,অনেক সময় এজেন্টরা কিছু না করলেও কিছু কিছু ঝামেলার কারণে বা অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্যেও ডেট পিছাতে পারে কারণ এই
সময় রোগীর পরিবার এবং রোগী অনেক মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ থাকে যার কারণে নিজেদের ভুল থাকলেও ধরা পড়েনা,ধরা পরে শেষ মুহূর্তে তখন ঠিক করতে গেলে আবার সময় লাগে ততক্ষনে বোর্ড ধরার সময় চলে যায়। সুতরাং দেশ ছাড়ার আগে তাদের সাথে বসে বারবার কাগজে সব কিছু মিল আছে কিনা পুংখানুপুখানুরূপে চেক করা উচিত। বাহিরের দেশে ট্রান্সপ্লান্ট পারমিশন দেওয়ার বোর্ড(যা সেই দেশের সরকার দ্বারা পরিচালিত) মাসে একবার বা দুইবার ইন্টারভিউয়ের সাক্ষাতের সময় দেয় তাই একটা বোর্ড মিস করলে নেক্সট বোর্ড মিটিং ধরার জন্য বসে থাকতে হয় তাই এজেন্ট এবং হাসপাতালের ট্রান্সপ্লান্ট কোর্ডিনেটরের সাথে সবসময় রুগীর এটেন্ডেন্সের বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ এবং খোঁজ রাখা জরুরি ।

So Be careful

💥আরো কিছু ধান্দা💥

কিছু ছোট খাটো বিষয় আছে যেমন কিডনি প্রতিস্থাপন হাসপাতাল প্যাকেজ কত ১৪০০০ নাকি ১৬০০০ ডলার এবং এই প্যাকেজ এর ভিতর কি কি অন্তর্ভুক্ত?

প্যাকেজ মুলামুলি করতে পারেন এবং ১৪০০০/১৫০০০ ডলার হলে কি কি পাচ্ছেন সেটা এজেন্ট এর সাথে কথা বলে নিবেন বিশেষ করে ট্রান্সপ্লান্ট এর পূর্ববর্তী চেকআপ,টেস্ট,প্যাকেজের মধ্যে কতগুলো ডায়ালাইসিস ফ্রি পাচ্ছেন এবং ট্রান্সপ্লান্ট এর পরবর্তী প্রথম সাত আট দিনের ডাক্তার ভিজিট,টেস্ট এবং যদি কোনো Biopsy লাগে সেটা প্যাকেজ এর ভিতর আছে কিনা সেগুলো ভালো ভাবে বলে নিবেন নাহলে বায়োপসি এবং টেস্ট এর জন্য সুযোগ পেলে এক্সট্রা দুই লক্ষ রুপি পর্যন্ত বিল তুলতে পারে যা সাধারণত প্যাকেজের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত থাকে সুতরাং সাবধান।

✅ 🚩🚩 মনে রাখবেন হাসপাতালের ট্রান্সপ্লান্ট এর যে প্যাকেজ কস্ট তা হাসপাতালের একাউন্টস সেক্শনেই দিতে হবে কোনো এজেন্টের হাতে দিবেন না কখনোই । এজেন্টকে কত টাকা ডকুমেন্ট করার জন্য বা বিভিন্ন কারণে দিচ্ছেন তার এভিডেন্স বা প্রমাণ রাখা আবশ্যক যাতে পরে ঝামেলা হলে বা কোনো কারণে সমস্যা হলে টাকা চাইতে বা তুলতে পারেন,প্রয়োজনে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তি করে নিবেন তার ঠিকানা এবং ভোটার আই ডি ব্যবহার করে,মনে রাখবেন স্ট্যাম্পে চুক্তি না করলে লিগাল ভ্যালু থাকে না,এগুলো ফলো করলে ট্রান্সপ্লান্ট খরচ অনেকাংশে কমে আসবে। 🚩🚩 ✅

▪️আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় - কিডনি প্রতিস্থাপন এর ২১ দিন পর ষ্টেন্ট খুলতে হয় সেটা Transplant প্যাকেজ এর ভিতরে থাকে। যদি এটা জিজ্ঞাস করতে যান তাহলে বলবে এটার খরচ আলাদা তাই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া আবশ্যক বা আগে থেকে এজেন্টের সাথে কথা বলে নিবেন।

▪️ হাসপাতালে আরো রোগী পাবেন দেশি বা বিদেশী যারা আগে থেকে এসেছে তাদের সাথে কথা বলতে পারেন বিভিন্ন ব্যাপারে তারা আগে আসলে তাদের কাছে থেকেও ইনফরমেশন পেতে পারেন কি কি সমস্যায় ভুগছে বা ভুগেছে তারা তাহলে আরো ক্লিয়ার আইডিয়া পাবেন.

লেখার উদ্দেশ্য ট্রান্সপ্লান্ট এর খরচ কমিয়ে নিয়ে ,Unfortunate ckd পেশেন্টদের দুঃখ নিজ চোখে দেখা। এই ব্যায়বহুল চিকিৎসার খরচ সতর্কতার সাথে চললে অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।

সমাপ্তি।

Writer - MD.Abul Bashar Siddique(shohag)

ⒸBKPA

Caution:
BKPA is a voluntary social organization whose mission is to raise awareness, promote and share knowledge about kidney disease. BKPA does not provide any kind of medical advice directly or indirectly through social media or any other platform which should only be done by the nephrologist or registered doctor. This is prohibited to take any kind of medical treatment based on the information provided by BKPA.
সতর্কতাঃ
বিকেপিএ একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন যার লক্ষ্য কিডনি রোগ সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি,প্রচার এবং সতর্ক করা। বিকেপিএতে সামাজিক মাধ্যম অথবা অন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করে বা সরাসরি প্রত্যক্ষ / পরোক্ষভাবে কোনো প্রকার চিকিৎসা সংক্রান্ত সেবা বা পরামর্শ প্রদান করা হয় না যা শুধুমাত্র আপনার নেফ্রোলজিস্ট এবং রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের এখতিয়ার।বিকেপিএ প্রদত্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোন প্রকার চিকিৎসা গ্রহণ নিষিদ্ধ।