Kidney Basics/কিডনি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা।

post-image

Kidney Basics/কিডনি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা।

কিডনী কি এবং এর অবস্থান কোথায়?

উত্তর :-কিডনী হচ্ছে বিন সাইজ বা সিমের বিচির মতো দেখতে শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ যা পেটের ভিতরে,পিঠের দিকে মেরুদণ্ডের দুইপাশে কোমরের উপরের অংশে অবস্থিত.মানবদেহে সাধারণত দুইটি কিডনি থাকে।

▪️প্রশ্ন:- কিডনীর কার্যকারিতা কি?

উত্তর:- কিডনীর কার্যকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা যা শরীরের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে।

কিডনী বা বৃক্কের কার্যকারীতা নিম্নরূপ :-

* কিডনী শরীরের ছাঁকনির কাজ করে অর্থাৎ বিপাক ক্রিয়া বা বিভিন্নভাবে শরীরে যে টক্সিক বা বর্জ্য পদার্থ জমে তা রক্ত থেকে ছেকে পরিষ্কার করে মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়।

*কিডনী বা বৃক্ক আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় পানি ধারণ করে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি শরীর থেকে মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়।

*কিডনী শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইটস এবং ভিটামিন মিনারেলসগুলো যেমন :- সোডিয়াম,পটাশিয়াম,ক্লোরাইড,বাই কার্বোনেট ,ক্যালসিয়াম ,ফসফরাস ইত্যাদির মাত্রা সঠিকভাবে ব্যালেন্স করে রাখে।

*কিডনী রক্ত পরিশোধন, ইলেক্ট্রোলাইটস নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসরণ করে যার মধ্যে Erythropoietin,Calcitrol,Renin Angiotensin ইত্যাদি অন্যতম এই হরমোনগুলো শরীর কার্যক্ষম রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

🌼 Erythropoietin হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে রক্তকণিকা বা রেড ব্লাড সেল উৎপাদনে সাহায্য করে।

🌼 কিডনী একটিভ ফর্ম অফ ভিটামিন ডি( Calcitrol) ঊৎপন্ন করতে সাহায্য করে যা ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং হাড়কে শক্ত বা হাড়ের স্বাস্থ্য সঠিক রাখে।

🌼 কিডনি Renin Angiotensin হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে।

কিডনী রোগীদের কিডনী যতবেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে এই হরমোনাল একটিভিটিস বা কার্যকারিতা গুলো কম করতে পারে তাই ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়,রক্তশূন্যতা বাড়তে থাকে এবং হাড় দুর্বল হতে থাকে।

▪️প্রশ্ন:- কিডনী রোগের কারণ কি?

উত্তর:- অধিকাংশক্ষেত্রে কিডনী রোগের মূল কারণ হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ/হাই ব্লাডপ্রেশার এবং ডায়াবেটিস বা বহুমূত্ররোগ এছাড়াও গ্লুমেরুলোনেফ্ৰাইটিস(কিডনি প্রদাহ যা কিডনীর ছাঁকনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়), অটোইমিউন ডিজঅর্ডার(যার কারণে শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজের অর্গানকে আক্রমণ করে বসে যেমনঃ IGA,LUPUS ইত্যাদি ),কিডনি স্টোন, ইনফেকশন বা সংক্রমণ,ওভার দা কাউন্টার ড্রাগের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন ইত্যাদি।

▪️প্রশ্ন:-কিডনী রোগের লক্ষণ কি কি এবং কিভাবে বুঝবো আমি কিডনি রুগী?

উত্তর:- কিডনী রোগকে অনেক সময় নিরবঘাতক বা সাইলেন্ট কিলার বলা হয়ে থাকে অর্থাৎ আপনার কিডনি ৭০ বা ৭৫ ভাগ ড্যামেজ বা ক্ষতিগ্রস্থ না হওয়া পর্যন্ত আপনি অনেক সময় বুঝতে পারবেন না বা শরীরে লক্ষন/সিম্পটম প্রকাশ পাবেনা. আবার সিম্পটম বা লক্ষণ যখন প্রকাশ পাবে তখন কিডনী অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে বা অ্যাডভান্স স্টেজ বা স্তরে চলে গেছে, তাই নিয়মিত সাধারণ কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি ধারনা পেতে পারেন নিজের কিডনীর অবস্থা বা রোগ সম্পর্কে।
কিডনী রোগের স্তর সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকটি পড়ুন :-

কিডনি রোগের স্টেজ/স্তর/অগ্রগতির পর্ব.

কিডনী রোগের কিছু লক্ষণের মধ্যে আছে :

*বমি বমি ভাব,*শরীর বিশেষ করে হাতে,পায়ে মুখে ফোলা ফোলা ভাব,

*প্রস্রাবের পরিমান তুলনামূলকভাবে কমে যাওয়া,

*প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়া,*প্রস্রাব লাল রং ধারণ করা,

*সর্বদা দুর্বলতা অনুভব করা,

*প্রস্রাবে প্রচুর ফেনা হওয়া,

*মুখে বাজে গন্ধ হওয়া, *চেহারা ফ্যাকাশে দেখা,

*কোমরের উপরে পিঠের দুইপাশে ব্যাথা হওয়া,

*রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া,

*মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া,

*শীত শীত বোধ হওয়া,

*ত্বকে চুলকানি এবং র‍্যাশ হওয়া ইত্যাদি।

প্রশ্ন:-কিডনীর বর্তমান অবস্থা বা কার্যক্ষমতা সম্পর্কে আমি কিভাবে জানতে পারবো ?

উত্তর:- প্রাথমিক ভাবে অল্প কিছু সাধারণ পরীক্ষা করলেই আপনি আপনার কিডনীর কার্যক্ষমতা বা রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা পেতে পারেন এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে রক্তে ক্রিয়েটিনিন/creatinine পরীক্ষা করা এবং ইউরিন রুটিন মাইক্রোস্কোপিক এবং এলবুমিন/মাইক্রো-এলবুমিন পরীক্ষা করা।

▪️প্রশ্ন:-কিডনি ভালো রাখার উপায় কি এবং এ থেকে আমি কিভাবে সচেতন হতে পারি?

উত্তর:- কিডনী রোগ থেকে সতর্ক থাকতে হলে নিচের নিয়মগুলো জানতে এবং মেনে চলতে হবে:-

১. কিডনী রোগ সম্পর্কে জানা এবং সচেতন হওয়া।

২. উচ্চরক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করার মাত্রা কঠোর ভাবে মাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে রাখা।

৩. সুস্থ থাকলেও ছয়মাস বা বছরে অন্তত একবার রক্তের ক্রিয়েটিনিন এবং মূত্রের রুটিন পরীক্ষা করা এবং নেফ্রলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া।

৪. ব্যালান্স ডায়েট খাওয়া বা খাবারে সঠিকভাবে ভারসম্য রক্ষা করে খাওয়া,অতিরিক্ত প্রোটিনজাতীয় খাবার না খাওয়া প্রয়োজনে ডায়টেশিয়ানের সাহায্য নেওয়া উচিত।

৫.লবন,তৈলাক্ত এবং প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাবার যেমন :চিপস,কোলা/কার্বনেট জাতীয় ড্রিঙ্কস, ঝাল,ভাজাপোড়া বা ডুবোতেলে ভাজা খাবার,ফাস্টফুড,অর্গান মিট ইত্যাদি পরিহার করা,ফাইবার জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া।

৬.ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা,স্থূলাকার ব্যাক্তির কিডনী রোগের সম্ভবনা কয়েকগুন বেশি থাকে।

৭. রক্তে চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করা।

৮. প্রত্যহ বা সপ্তাহে পাঁচদিন এক্সারসাইজ করা যেমন:- হাটা,যোগব্যায়াম ইত্যাদি।

৯.যেকোন ধরণের ইনফেকশন বা সংক্রমণের চিকিৎসা দ্রুত করা।

১০. OTC(over the counter) Drug বা ওষুধগুলো ( OTC ড্রাগ হচ্ছে সেগুলোকে বলে যা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই মেডিসিন স্টোর বা ফার্মেসি থেকে সহজে কেনা যায়) বিশেষ করে ব্যাথানাশক ওষুধের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া বা সঠিক মাত্রায় খাওয়া এনং দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা।

১১. যাদের পারিবারিক ইতিহাসে কিডনী রোগ আছে তাদের সতর্ক হওয়া এবং কিডনী সংক্রান্ত টেস্টগুলো নিয়মিত করা।

১২.অতিরিক্ত পানিশূন্যতা বা ডায়রিয়া বা বমি বা লবণশূন্যতা বা ইলেক্ট্রোলাইটস ইমব্যালেন্স হঠাৎ কিডনি বিকল করতে পারে তাই খাবার স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করা বা ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ইত্যাদি।

ⒸBKPA

Caution:
BKPA is a voluntary social organization whose mission is to raise awareness, promote and share knowledge about kidney disease. BKPA does not provide any kind of medical advice directly or indirectly through social media or any other platform which should only be done by the nephrologist or registered doctor. This is prohibited to take any kind of medical treatment based on the information provided by BKPA.
সতর্কতাঃ
বিকেপিএ একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন যার লক্ষ্য কিডনি রোগ সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি,প্রচার এবং সতর্ক করা। বিকেপিএতে সামাজিক মাধ্যম অথবা অন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করে বা সরাসরি প্রত্যক্ষ / পরোক্ষভাবে কোনো প্রকার চিকিৎসা সংক্রান্ত সেবা বা পরামর্শ প্রদান করা হয় না যা শুধুমাত্র আপনার নেফ্রোলজিস্ট এবং রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের এখতিয়ার।বিকেপিএ প্রদত্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোন প্রকার চিকিৎসা গ্রহণ নিষিদ্ধ।