Kidney Disease (Child) - শিশুদের কিডনি রোগ

post-image

শিশুদের কিডনি রোগ"

শিশুদের কিডনি রোগ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন- কিছু আছে চিকিৎসাযোগ্য - প্রথম থেকে সঠিক চিকিৎসা করলে শিশুদের পরবর্তীতে কোন অসুবিধা হয়ে থাকেনা। আবার কিছু কিডনি রোগ আছে হঠাৎ হয়ে থাকে এবং এতে করে পরবর্তীতে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, আবার যদি এর সঠিক কারন চিহ্নিত করে চিকিৎসা করা যায় তবে তা ভালো হয়ে যেতে পারে।

ক্রনিক কিডনি রোগ (Chronic Kidney Diseases) যা সিকেডি (CKD) নামে পরিচিত তা চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হয়না, চিকিৎসা দ্বারা শুধুমাত্র রোগের মাত্রা কে কমিয়ে রাখা যায়। সিকেডি হলে সময়ের সাথে সাথে কিডনির কার্যক্ষমতা হারায় ফেলে যা End Stage Renal Failure (ESRD) বলা হয়। ESRD পর্যায়ে চলে গেলে একমাত্র চিকিৎসা ডাইয়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন।

শিশুদের জন্য সিকেডি (CKD) একটি চ্যালেঞ্জিং সমস্যা, যা শিশুদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। যেমনঃ পারিবারিক সম্পর্কে টানাপোড়ন, আচরণগত সমস্যা, পড়ালেখায় অমনোযোগিতা এবং সর্বোপরি মানসিক বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে।

শিশুদের কিডনি রোগের কারন গুলো বিশ্লেষণ করলে এভাবে বলা যায়-

১. জন্মগত ত্রুটি

২. বংশগত কিডনি রোগ

৩. নেফ্রোটিক সিনড্রোম

৪. ট্রমা বা ইনজুরি

৫. Reflux (রিফ্লাক্স) বা প্রস্রাব নিঃসরনে বাধাগ্রস্থ হওয়া।

৬. সংক্রমণ/ইনফেকশন

৭. অন্যান্য রোগের প্রভাব

পাঁচ (৫) বছরের নিচে শিশুদের কিডনি রোগ সাধারনত জন্মগত ত্রুটি অথবা বংশগত রোগের কারনে হয়ে থাকে। পাঁচ থেকে চৌদ্দ বছরের শিশুদের সাধারনত বংশগত রোগ, নেফ্রোটিক সিনড্রোম অথবা অন্য রোগের প্রভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-

১. জন্মগত ত্রুটি –

জন্মগত কিডনি সমস্যা সাধারণত মায়ের গর্ভাবস্থায় থেকে শুরু হয়। যেমনঃ কিডনির অনুপস্থিতি ( জন্মগত ভাবে একটি কিডনি থাকে , কখনোবা একটিও থাকে না), Ectopic Kidney (জন্মের সময় কিডনি যে জায়গায় থাকার কথা সেখানে না থেকে শরীরের অন্য স্থানে থাকে), Renal dysplasia ( দুইটি কিডনি থাকে কিন্তু হয়তোবা একটি কিডনি কাজ করেনা)।এধরনের সমস্যা নিয়ে শিশুরা সুস্থ জীবন যাপন করলেও অনেক সময় শিশুদের ক্রনিক কিডনি রোগের সম্ভাববনা বাড়িয়ে দেয়।

২. বংশগত কিডনি রোগ

শিশুরা মা বাবার কাছ থেকে জন্মের মাধ্যমে এই কিডনি রোগ পেয়ে থাকে। যেমন Polycystic kidney disease (পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ)। এই রোগের ফলে কিডনীতে অনেক সিস্ট হয় যার ফলে আস্তে আস্তে কিডনি তাঁর কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে থাকে।

আরেকটি বংশগত কিডনি রোগ হলো Alport Syndrome (এলপোর্ট সিনড্রোম) যার ফলে শিশুদের কিডনি রোগের সাথে সাথে চোখ ও কানের সমস্যাও হয়ে থাকে।

৩. সংক্রমণ (Infection)

সংক্রমণ বা ইনফেকশন হলো শিশুদের কিডনি রোগের একটি বড় কারন। যেমনঃ খাবারের মাধ্যমে (দুগ্ধজাত, মাংস জাতীয়) ইকোলাই (E.coli) নামক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয় যা রক্তের মাধ্যমে কিডনিতে ছড়িয়ে কিডনি কে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এই ধরনের সংক্রমণ হলে বাচ্চারা সাধারনত বমি, রক্ত পায়খানা এবং প্রস্রাবের পরিমান কমে গিয়ে কিডনি বিকল হয়ে থাকে।

আরেক ধরনের সংক্রমণ যা গলা এবং চর্মের ইনফেকশনের মাধ্যমে শুরু হয়। যদি সময়মত চিকিৎসা করা না যায় তবে এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় যা বমি ও মাথা ব্যথা মাধ্যমে বোঝা যায় এবং ফলশ্রুতিতে রক্ত প্রসাব দেখা দেয় এবং পরবর্তীতে কিডনি বিকলও হতে পারে।

৪. নেফ্রোটিক সিনড্রোম

এই রোগে শিশুদের মা বা শিশুদের চোখ,মুখ,পা এবং পেট ফোলা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। শিশুদেরও এই রোগের ফলে প্রস্রাবের পরিমান কমে যায় এবং ঘোলাটে প্রস্রাব হয়। শিশুদের প্রস্রাবের পরীক্ষা করলে এতে অনেক বেশি পরিমান এলবুমিন বা প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রথম থেকে সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে এর ফলেও কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৭. অন্যান্য রোগের প্রভাব

ডায়াবেটিস, লুপাস (Lupus) , উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure), ডায়রিয়া, ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশন এর কারনেও কিডনি বিকল হতে পারে।

৪. ট্রমা বা ইনজুরি

দগ্ধ হলে , শরীরে পানির স্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশন , অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অপারেশন পরবর্তী জটিলতা যেমন হটাৎ রক্ত চাপ কমে যাওয়ার কারনেও কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে।

৫. Reflux (রিফ্লাক্স) বা প্রস্রাব নিঃসরনে বাধাগ্রস্থতা

অনেক সময় শিশুর জন্মগত ভাবে কিডনি থেকে মূত্রনালি পর্যন্ত যেকোনো জায়গায় ব্লক (block) থাকতে পারে। ফলশ্রুতিতে, প্রস্রাব বা ইউরিন ঠিকভাবে বের না হয়ে তা ব্লাডারে জমে কিডনির দিকে ব্যাক ফ্লো বা Reflux করে কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।

★কখন আপানার শিশুকে একজন চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য নিয়ে যাবেন ?

যেসব লক্ষন দেখলে শিশুর মা-বাবা একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন-

  • বমি
  • মাথা ব্যাথা
  • ইউরিনের পরিমান কমে গেলে
  • লাল ইউরিন হলে
  • ঘোলাটে প্রস্রাব হলে
  • চোখ, মুখ, পা ও পেট ফোলা মনে হলে
  • বার বার প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া হলে
  • গলা ব্যাথা বা চর্ম রোগের পড়ে চোখ বা মুখ ফুলে গেলে
  • চোখ ঝাপসা দেখলে
  • ধীরে ধীরে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলে
  • শারীরিক বৃদ্ধি কম হচ্ছে বলে মনে হলে
  • পিঠের পিছনে কোমরের উপরের দুই দিকে বার বার ব্যাথা অনুভূত হলে
  • ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হলে
  • কিডনির নালিতে প্রস্রাব হচ্ছে বলে মনে হলে

কিভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে –

শিশুদের কিডনি রোগ নির্ণয় নির্ভর করে লক্ষণসমূহের উপর ভিত্তি করে। সাধারন কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে কিডনি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।

a. Dipstick Test for Albumin-

যার মাধ্যমে ইউরিনে প্রোটিন বা এলবুমিন যাচ্ছে কিনা বোঝা যায়।

b. Routine Urine Test ( Urine R/E)

এখানে Pus Cell, RBC এগুলো থেকে ইনফেকশন এবং ইউরিনের সাথে রক্ত যাচ্ছে কিনা বোঝা যায়।

c. Urine Culture ( Urine C/S)

এই টেস্টের মাধ্যমে প্রস্রাবে কোন সংক্রমণ আছে কিনা তা বোঝা হয়।

d. CBC ( Complete Blood Count )

ক্রনিক কিডনি ডিজিস হলে যে শরীরে রক্তের (Haemoglobin) স্বল্পতা দেখা যায় তা এই টেস্টের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়।

e. Urine Albumin to Creatinine Ratio (Urine ACR)

এই টেস্টের মাধ্যমে শরীর থেকে কি পরিমান প্রোটিন ও ক্রিয়েটিনিন বের হচ্ছে তা থেকে ক্রনিক কিডনি ডিজিস নির্ণয় করা হয়।

f. Serum Creatinine, Serum Urea, BUN, GFR-

কিডনি তাঁর কার্যক্ষমতা কতটুকু চালাতে পারছে তা এসকল টেস্টের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

**g. Imaging (Ultrasonography, IVU, CT Scan, DMSA)-

**কিডনির গঠনগত পরিবর্তন গুলো এই সকল টেস্টের মাধ্যমে বোঝা যেয়ে থাকে।

**_h. Kidney Biopsy-

_**কোন কোন ক্ষেত্রে কিডনি রোগের সঠিক কারন অবলোকন করার জন্য কিডনি বাইওপসি করা হয়ে থাকে।

★কিডনি রোগের চিকিৎসাঃ

কিডনি রোগের চিকিৎসা সাধারণত দুই ভাবে করা হয়ে থাকে-

a. পুষ্টি ও খাদ্যাভ্যাস (Nutrition & Diet)

ক্রনিক কিডনি ডিজিজের (CKD) কারণে শিশুদের বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট পরিমানের প্রোটিন এর প্রয়োজন হয়. তবে অত্যাধিক প্রোটিন কিডনি ডিজিজকে আরো বেশি খারাপের দিকে নিয়ে যায়. তাই চিকিৎসক ও ডাইটিসিয়ান এর পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে প্রোটিন খেতে হয়।

b. ইলেকট্রলাইটস ব্যাল্যান্স (Electrolytes Balance)

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস গ্রহণ করতে হবে। যেসমস্ত খাবারে সোডিয়াম বেশি যেমন - টিনজাত খাদ্য , ফ্রোজেন খবর, প্রেসেসড যে কোনো খাবার (চিপস, স্ন্যাকস) এসব এড়িয়ে চলতে হবে । একইভাবে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার সতর্কতার সাথে গ্রহণ করতে হবে। কারণ কারো শরীরে পটাসিয়াম বেশি পরিমানের গ্রহণের প্রয়োজন হয় আবার কারো বা অতিরিক্ত পটাসিয়াম গ্রহণ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

c. ফ্লুইড ইনটেক (Fluid Intake) বা তরল খাবার-

কোনো কোনো ক্রনিক কিডনি রোগীকে সারাদিনে নির্দিষ্ঠ পরিমান তরল খাবার গ্রহণ করতে হয় যা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে গ্রহণ করা বাঞ্চনীয়।

d. ওষুধ ( Medication)

বেশির ভাগ ক্রনিক কিডনি রোগী উচ্চ রক্ত চাপে ভুগে থাকেন যা কিডনি রোগকে আরো তরান্নিত করে এন্ডস্টেজ এর দিকে নিয়ে থাকে। তাই প্রথম থেকে AC- Inhibitor গ্রহন করা উচিৎ যার ফলে প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বের হওয়াকে নিয়ন্ত্রন করে। অনেকসময় প্রস্রাবের পরিমান (Urine Flow) বৃদ্ধির জন্য Diuretics Medication নিতে হয়।

২. CKD End Stage Treatment-

কিডনি যখন পুরোপুরি বিকল হয়ে যায় তখন এক জন মানুষ বেঁচে থাকার জন্য দুইটি চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়-

(i) ডায়লাইসিস – ( Dialysis - Peritoneal Dialysis & Haemodialysis)

(ii) কিডনি প্রতিস্থাপন (Renal Transplantation)

ব্রি.দ্র.

কিডনি রোগের লক্ষন ও চিকিৎসা বিভিন্ন রোগের ধরনের উপর নির্ভর করে। তাই যেকোনো অবস্থাতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

ধন্যবাদ।

**
Writer-**

Dr. Faisal Ahmed
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান।
শিশু বিভাগ। ইমপেরিয়াল হাসপাতাল,চট্টগ্রাম।

Caution:
BKPA is a voluntary social organization whose mission is to raise awareness, promote and share knowledge about kidney disease. BKPA does not provide any kind of medical advice directly or indirectly through social media or any other platform which should only be done by the nephrologist or registered doctor. This is prohibited to take any kind of medical treatment based on the information provided by BKPA.
সতর্কতাঃ
বিকেপিএ একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন যার লক্ষ্য কিডনি রোগ সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি,প্রচার এবং সতর্ক করা। বিকেপিএতে সামাজিক মাধ্যম অথবা অন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করে বা সরাসরি প্রত্যক্ষ / পরোক্ষভাবে কোনো প্রকার চিকিৎসা সংক্রান্ত সেবা বা পরামর্শ প্রদান করা হয় না যা শুধুমাত্র আপনার নেফ্রোলজিস্ট এবং রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের এখতিয়ার।বিকেপিএ প্রদত্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোন প্রকার চিকিৎসা গ্রহণ নিষিদ্ধ।