All About Dialysis - ডায়ালাইসিসের এর আদ্যপান্ত

post-image

ডায়ালাইসিস এর আদ্যপান্ত (All About Dialysis)

ডায়ালাইসিস কি,কয় প্রকার এবং এর প্রয়োজন কেন ?

ডায়ালাইসিস একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা ব্যবস্থা যেখানে কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হওয়ার পর আপনার রক্তের দূষিত ও ক্ষতিকর পদার্থ পরিশোধন করে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখে যা আপনার কিডনি সুস্থ অবস্থায় করতো সুতরাং ডায়ালাইসিসকে আপনি বিকল্প রক্ত পরিস্কারক পদ্ধতিও বলতে পারেন।

প্রশ্ন :- ডায়ালাইসিস কয় প্রকার ভাবে করা হয়ে থাকে?

উত্তর :- ডায়ালাইসিস দুই ধরণের হয়ে থাকে *এক নম্বর হচ্ছে হেমোডায়ালাইসিস এবং * দুই নম্বর হচ্ছে পেরিটোনাল ডায়ালাইসিস।

🌼 হেমোডায়ালাইসিস :-

ইহা একটি মেশিন বা যন্ত্র যা শরীরের রক্ত ক্যাথেটার/ফিস্টুলার সাহায্যে শিরা দিয়ে টেনে শরীরের বাহিরে মেশিনে প্রবেশ করানো হয় এবং মেশিনের মধ্যে ছাকনি বা ডায়ালাইজার থাকে যা রক্ত থেকে টক্সিন বা বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করে আবার শিরা পথে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। ডায়ালাইসিস আপনাকে করতে হয় সপ্তাহে সাধারণত দুইটি বা তিনটি ৪ ঘন্টার জন্য যা নির্দিষ্ট হাসপাতাল বা ডায়ালাইসিস সেন্টারে গিয়ে। দীর্ঘ HemoDialysis রোগী যে এখন ৪৬ বছর ধরে Dialysis নিচ্ছে এবং এখনো সুস্থ আছে,তিনি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছে।

🌼 পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস :-

এটি একধরণের রক্ত পরিষ্কারের পদ্ধতি যা শরীরের মধ্যে ডায়ালাইসিস দ্রবণ নলের মাধ্যমে ঢুকানো হয়। পেটের মধ্যে মিউকাস মেমব্রেন ছাঁকনির কাজ করে অর্থাৎ যে দ্রবণটি পেটে ঢুকানো হলো তা সেখানে রাখা হলে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ অসমোসিস বা অভিস্রাবন পদ্ধতিতে শুষে নেয়।এই মাধ্যমে তেমন কোনো যন্ত্রপাতি লাগেনা এবং রোগী নিজে নিজেই করতে পারে দিনে কয়েকবার করতে হয় একে *কন্টিনিউয়াস অ্যাম্বুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস বলা হয়। আরেকধরণের পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস আছে যার নাম *কন্টিনিউয়াস সাইক্লিক পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস এটি সাধারণত রুগী রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় করে থাকে এটি করতে ছোট একটি মেশিন বা যন্ত্রের সাহায্য লাগে।

✳ সুস্থ কিডনি আপনার রক্ত পরিশোধনের পাশাপাশি হরমোনাল কাজ ও করতো যেটার মাধ্যমে আপনার রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রন থেকে শুরু করে রক্ত তৈরির কাজও করতো যেটা Dialysis মেশিন করতে পারে না সে জন্য আপনাকে রেগুলার রক্তচাপ এর ওষুধসহ রক্ত তৈরির জন্য আলাদা হরমোন (Epoetin) শরীরে গ্রহণ করতে হয় যেহেতু আপনার কিডনি বিকল।

বাংলাদেশের ডায়ালাইসিস ব্যবস্থা কেমন এবং কেন রুগীরা এখানে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারেনা বা জীবনের স্থায়িত্ব কম হয়?

১। Dialysis পৃথিবীজুড়েই একটি ব্যায়বহুল চিকিৎসা,পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশের প্রত্যেক হাসপাতালের কোয়ালিটি কমবেশি প্রায় একই রকম এবং তাদের dialysis চিকিৎসা ব্যাবস্থায় সরকার ভূর্তুকি বা ইন্সুরেন্স ফেসিলিটি দেয় যেটা বাংলাদেশের মতো দেশে এখনো চালু হয়নি,আর Bangladesh এ নামমাত্র মূল্যে অথবা ফ্রি যে dialysis দেওয়া হয় তার কোয়ালিটি বা ব্যাবস্থাপনা এখনো অতটা উন্নত নয়.

২।বাংলাদেশেও দীর্ঘদিন Dialysis এর রোগী টেকানো সম্ভব যদি আপনার কোনো আর্থিক সীমাবদ্ধতা না থাকে।দুঃখের বিষয় ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড বা মানসম্পন্ন বা কাছাকাছি মানসম্পন্ন dialysis পেতে হলে আপনাকে বাংলাদেশের গুটিকয়েক বেসরকারি ব্যায়বহুল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে যেখানে Dialysis ব্যায় অনেক এবং হাতেগোনা কিছু মানুষ ছাড়া এর ব্যায়ভার বহন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা,যদিও কিছু হাসপাতাল কমমূল্যে মোটামুটি বা কাছাকাছি সঠিক ব্যাবস্থাপনায় ডায়ালাইসিস দেওয়ার চেষ্টা করছে যা খুবই নগন্য.

প্রপার এবং পর্যাপ্ত Dialysis বলতে কি বুঝি এবং কিভাবে Dialysis করলে একজন রোগী দীর্ঘদিন বাঁচতে পারে -

আপনাকে dialysis নিতে হবে সপ্তাহে সাধারণত তিনটা কারণ আপনার শরীরে যত ইউরিয়া,ক্রিটিনিনে এবং টক্সিন কম থাকবে আপনি তত ভালো থাকবেন, তারপরেও আপনার ওভারঅল কন্ডিশন দেখে ডাক্তার কম করতে পারে এই সংখ্যা।

কিন্তু আমাদের দেশে রোগীদের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা একটা বা দুইটার বেশি নিতে চান না অথবা নিলেও এই ব্যায়বহুল চিকিৎসা বেশিদিন কন্টিনিউ করতে পারেন না।

যেখানে একটা dialysis করতে গেলেই খরচ নিয়ে হিমশিম খায় সেখানে প্রপার dialysis তো অনেক দূরের ব্যাপার।

Dialysis Technician অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় যেখানে উনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রোগী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ।উনি রোগীর অবস্থা অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবে এবং দরকার হলে কোনো বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তের সময় nephrologist কে জানাবে তাৎক্ষণিক ভাবে,dialysis চলার সময় dialysis টেকনিশান সার্বক্ষণিক আপনার ব্লাড প্রেসার এবং সুগার চেক করতে থাকে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ভালো ডায়ালাইসিস ইউনিট গুলোতে নেফ্রোলজিস্ট প্রত্যহ round দেয় এবং উপস্থিত থাকে যা বাংলাদেশে এই ব্যবস্থা নগন্য .

ফিস্টুলা (Fistula ) তাড়াতাড়ি করে ফেলবেন যখন নেফ্রোলজিস্ট বুঝে যাবে আপনি ডায়ালাইসিস এর দিকে চলে গেছেন এবং যত তাড়াতাড়ি ফিস্টুলা দিয়ে ডায়ালাইসিস শুরু করবেন ততই ভালো যা ম্যাচুরড হতে সময় নেয় এবং মনে রাখবেন ফিস্টুলা ইনফেকশন এর চান্স অনেক কমিয়ে দেয়.

আপনার নেফ্রোলজিস্ট যখন আপনাকে ফিস্টুলা করে রাখতে বলবেন গড়িমসি না করে সে সময় তা করে ফেলবেন কারণ ফিস্টুলা ডায়ালাইসিস করার জন্য সবচেয়ে সেফ উপায়.ইমার্জেন্সি ডায়ালাইসিস লাগলে তখন ক্যাথেটার ছাড়া আর উপায় থাকে না যা ইনফেকশনের রিস্ক/সমস্যা বাড়িয়ে দেয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ. নেফ্রোলজিস্ট অনেক সময় কিছুটা সুস্থ থাকা অবস্থাতেই ফিস্টুলা করতে বলেন কিন্তু রুগী শুনতে চাননা বা মনে করেন এখন না পরে যেহেতু সুস্থ আছি যা ভুল এবং পরে আরো সমস্যা দ্বিগুন বাড়িয়ে দিতে পারে.

ক্যাথেটার (Catheter) একটি ফরেন বডি অর্থাৎ শরীরের বাহিরের অংশ হিসেবে থাকে তাই ইনফেকশন এর চান্স বেশি থাকে যদিও ক্যাথেটার দিয়ে দীর্ঘদিন ডায়ালাইসিস করলে সাধারণত এই ইনফেকশন এর চান্স বেড়ে যায় তবে এফেক্টেড যেকোনো সময় হতে পারে এটাও সত্যি.*ক্যাথেটার দিয়ে ডায়ালাইসিস করার আগে ওপেন করা হয় এবং পরে ডায়ালাইসিস শেষে তা বন্ধ করা হয় তাই ভালো করে ওপেন এবং ডায়ালাইসিস শেষে বন্ধ করার সময় সঠিক ভাবে স্ট্রেইল করে ড্রেসিং করে বন্ধ করা খুব ইম্পরট্যান্ট তাই এ ব্যাপারে ডায়ালাইসিস টেকনিশিয়ানের গুরুত্ব অনেক বেশি ঠিকমতো ড্রেসিং করছে কিনা আগে পরে এবং কেয়ারগিভার হিসেবে যিনি থাকবেন তিনিও বিষয়টা খেয়াল রাখবেন নাহলে ইনফেকশন এর চান্স বেড়ে যায়.

শারীরিক দুর্বলতার জন্য Dialysis এর সময় এবং আগে পরে Nutritious খাদ্য গ্রহণ করা উচিত যা গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে প্রোটিন ডায়েট যেমন মুরগির সাদা অংশ ,মাছ,ডিমের সাদা অংশ ইত্যাদি, প্রত্যহ ডায়ালাইসিস করলে শক্তি/এনার্জি দরকার হয় তাই প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি খেতে হয়। ডায়ালাইসিস করার মাধ্যমে শরীর থেকে বেশ কিছু ভিটামিন, মিনারেলস বের করে ফেলে তাই Dialysis ইউনিটগুলো রোগীর ভিটামিন এর ঘাটতি পূরণ করার জন্য ডায়ালাইসিস শেষে vitamin কম্বিনেশন ইনজেকশন পুশ করেন বা পাশাপাশি vitamin/multivitamin/antioxidant খেতে দেয় কারণ ভিটামিন শরীর এর ব্লাড circulation থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে এবং আপনাকে শক্তি দেয়। রেড মিট/অর্গান মিট এভোইড করা উচিত কারণ তা লিপিড, ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়।

রক্তে ফসফরাস (Blood Phosporus) এর পরিমান নিয়ন্ত্রণ জরুরি তাই ফসফরাস জাতীয় খাবার কম খাবেন যেমন :বাদাম ,ডেইরি (দুধ ,পনির ,মাখন ইত্যাদি),অনেক সময় ফসফরাস জাতীয় খাবার কন্ট্রোল করলেও ডায়ালাইসিস রোগীদের ফসফরাস কমে না তখন নেফ্রোলজিস্ট দেড় ফসফরাস কমানোর ওষুধ বা ফসফরাস বাইন্ডার দেওয়া ছাড়া উপায় থাকেনা যেমন : sevelamer hydrochlorid (ব্র্যান্ড নাম -renvela ,renagel etc ) ,ক্যালসিয়াম এসিটেট ইত্যাদি এগুলো খেতে হতে পারে নেফ্রোলজিস্ট এর পরামর্শে.

Dialysis এর সময় Single Dialyzer ব্যবহার করা উচিত,যদিও পুনরায় ব্যবহার করা যায় তারপরেও Hepatitis B, C এবং অন্যান্য ভাইরাস থেকে সতর্ক থাকার জন্য।

ডায়ালাইসিস শুরু করার পূর্বে ভ্যাকসিন (Vaccine) বা টিকার শিডিউল কমপ্লিট/সম্পূর্ণ উচিত যেমন হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন,নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন,ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন ইত্যাদি.

Dialysis এর সময় ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট (Fluid Management) জরুরি অর্থাৎ আপনার ড্রাই ওয়েট কত,শরীর থেকে কি পরিমান পানি বাহির করতে হবে তা নেফ্রোলজিস্ট বা নেফ্রোলজিস্ট এর তত্ত্বাবধায়নে ডায়ালাইসিস টেকনিশিয়ান সিদ্ধান্ত নিবে। ড্রাই ওয়েট হচ্ছে ডায়ালাইসিস এর পর বা বা মেশিন পানি বের করার পর যে ওয়েট হয় এবং একটা ডায়ালাইসিস শেষ করার পর পরবর্তী ডায়ালাইসিস নেওয়ার আগে মধ্যবর্তি সময় বা দুই একদিনের মধ্যে যে এক্সট্রা পানি শরীরে জমে তা ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে বের করার পর যে ওজন হয় সেটাই Dry weight.দেখবেন ডায়ালাইসিস এর আগে এবং পরে নিয়মিত চার্ট লেখে রাখে এবং বুঝতে পারে আগের এবং পরের ডায়ালাইসিস এ কি পরিমান পানি জমলো এবং সে অনুযায়ি বা সে পরিমান পানি ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে বের করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং আপনি বেশি পানি খাচ্ছেন কিনা বা নির্ধারিত পরিমান পানির চেয়ে বেশি খাচ্ছেন কিনা সেটা বোঝা যায় এবং নেফ্রোলজিস্ট সে অনুযায়ি ইন্সট্রাকশন দেয় বা ব্যবস্থা গ্রহণ করে.ভালো dialysis ইউনিট গুলো এটাকে অধিক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে কারণ ফ্লুইড ওভার লোড হলে আপনার কার্ডিয়াক চাপ আসতে পারে বা শ্বাস কষ্ট হতে পাড়ে যেটা খারাপ। আবার শরীর থেকে dialysis এর সময় মাত্রার অতিরিক্ত পানি বাহির করলে পেশিতে বারবার টান লাগা থেকে শুরু করে ব্লাড প্রেশার কমে বা হঠাৎ কমে যেতে পারে যা গুরুতর ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। ভালো Dialysis ইউনিট গুলো BCM(Body composition Monitor)/Bioimpedance spectroscopy টেস্টও করে পানি কতটুকু বাহির অথবা শরীরে রাখতে হবে তা নির্ধারণ করে।

ডায়ালাইসিস রোগীদের পানি মেইনটেইন করা জরুরি,যাদের পানি বেশি আসে শরীরে তাদের স্ট্রীক্টলী ডেইলি পানি ইনটেক বা ২৪ ঘন্টায় ৫০০ ml বা ৭৫০ ml বা সর্বোচ্চ ১ লিটার করা উচিত এবং কতটুকু খেতে হবে নেফ্রোলজিস্ট আপনার শরীরে পানি আসা দেখে বা অন্নান্ন কন্ডিশন দেখে নির্ধারণ করে দিবে কারণ অনেক ডায়ালাইসিস রোগীর ইউরিন আউটপুট ভালো থাকে আবার অনেকের ইউরিন অউটপুটি হয় না .যদি এক্সট্রা কোনো চা ,কফি ইত্যাদি খান সেটাও নির্ধারিত পরিমান পানি থেকে মাইনাস করতে হবে অর্থাৎ পানি যদি আপনার জন্য নির্ধারিত হয় ৫০০ ml তাহলে চা বা কফি বানানোর জন্য ওই ৫০০ ml পানি থেকে নিয়ে চা বা কফি বানাতে হবে .

ব্লাড প্রেশার (Blood Pressure) নিয়ন্ত্রণ খুব গুরুত্বপূর্ণ,বিভিন্ন গ্রুপের ব্লাড প্রেশার ওষুধ আছে যেগুলা নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর, সেগুলো প্রয়োগ করে কোনটা বেশি কাজ করছে তা দিনের কয়েকটা সময় ব্লাড প্রেশার মেপে মেপে নির্ধারণ করা উচিত,একটা কাজ না করলে কম্বিনেশন দেয় তাই এসব ক্ষেত্রে আপনার ডায়ালাইসিস ইউনিট এর নেফ্রোলজিস্ট এবং এর সাথে কার্ডিওলজিস্ট এর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি.ডায়ালাইসিস করার সময় যদি ব্লাড প্রেশার ফল করে বা কমে যায় তার আগের নির্ধারিত ব্লাডপ্রেসারের ওষুধের ডোজ ঠিক মতো নির্ধারণ করতে হবে দরকার হলে কমিয়ে খেতে হবে বা অর্ধেক করতে হবে নেফ্রোলজিস্ট এর পরামর্শে যেমন:- আপনার ডায়ালাইসিস এর সময় সকাল ৯ টায় আর আপনার নিয়মিত সকালের ব্লাডপ্রেশার ওষুধ খাওয়ার সময় সকাল ৮ টায়,যদি দেখেন প্রত্যহ ডায়ালাইসিস এর সময় ব্লাড প্রেশার কমে যাচ্ছে তখন ব্লাড প্রেশারের ওষুধ কমিয়ে খেতে হবে বা বেশি কমে গেলে সেদিন সকালের ডোজ বন্ধ রাখতে হবে আবার যেদিন ডায়ালাইসিস থাকবে না তখন আবার সেম ডোজ খেতে হতে পারে.এ জিনিস গুলো এক ডায়ালাইসিস রোগী থেকে আরেকজন ভিন্ন হয় তাই এই চেঞ্জগুলো নেফ্রোলজিস্ট কে জানিয়ে নির্ধারণ করা জরুরি বা করতে হবে.

খাবারে লবণের পরিমান একেবারে কমিয়ে দিবেন বা বন্ধ করুন এবং ভাতের সাথে এক্সট্রা বা টোকা লবন খাওয়া উচিত না,মুখে নোনতা অনুভূত হয় এরকম সব খাবার এর কথা ভুলে যান.

প্রত্যেক ভালো Dialysis ইউনিট গুলো আপনাকে রেগুলার বেসিস এ Electrolytes, Hemoglobin ,cardiac টেস্ট গুলো করে এবং একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মনে রাখবেন কিডনি রক্ত পরিশোধন, ইলেক্ট্রোলাইটস নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসরণ করে যার মধ্যে Erythropoietin, calcitrol,renin অন্যতম.এই হরমোনগুলো শরীর কার্যক্ষম রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে.

*Erythropoietin, যা রেড ব্লাড সেল উৎপন্ন করতে সাহায্য করে,সোজা বাংলায় হিমোগ্লোবিন/রক্ত বাড়ায়.

*Calcitrol হচ্ছে ভিটামিন ডি ( Vitamin D) এর একটিভ ফর্ম যা ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট শোষণে সাহায্য করে এবং হার কে শক্তিশালী করে .

*Renin,যা ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে বড়ো ভূমিকা রাখে .

*তাই দেখবেন কিডনি রোগীদের কিডনি যত ক্ষতিগ্রস্থ বেশি হতে থাকে এই হরমোনাল একটিভিটিস গুলা কম করতে পারে তাই ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় , রক্তশূন্যতা বাড়তে থাকে এবং হাড় দুর্বল হতে থাকে

*ডায়ালাইসিস শুধু রক্ত পরিশোধন করতে পারে কিন্তু এই হরমোনাল কাজগুলো করতে পারে না তাই বাহির থেকে এই উপাদানগুলো শরীরে দেওয়া হয় যাতে শরীর তার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে পারে বা করার চেষ্টা করতে পারে যা ব্যায়বহুল এবং পরিপূর্ণ ভাবে করতে পারে না। যেহেতু মেশিন হরমোনের কাজ করতে পারে না এই জন্য রক্ত চাপ (Blood Pressure) নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য ওষুধ গ্রহণ, একটিভ ফর্ম Vitamin D সহো রক্ত বাড়ার জন্য ইরাইথ্রোপোয়েটিন (Erythropoietin)ইনজেকশন, আয়রন(iron) ইনজেকশন বা ওরাল আয়রন ট্যাবলেট নিতে হয়।

Blood transfusion:-যারা ভবিষ্যৎ বা নিকট ভবিষ্যতে ট্রান্সপ্লান্ট করবেন বা করতে চাচ্ছেন তারা ব্লাড ট্রান্সফিউশন বা রক্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন। আসলে রক্ত নেওয়া ইমার্জেন্সি হলে বা তাৎক্ষণিক দরকার হলে তো আর কিছু করার নাই, নিতেই হবে তবে প্রথম থেকে যদি এলার্ট হয়ে রক্তের হরমোন ইনজেকশন(Erythropoietin) সঠিক মাত্রায় নেন এবং আইরন suppliment ইনজেকশন আকারে নেন বা খান তখন রক্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা কমে যায় কারণ রক্ত নিলে ক্রসম্যাচ/ম্যাচিং এ ঝামেলা হওয়ার পসিবিলিটি বেড়ে যায় ইমিউনোলজিকাল ও এন্টিবডি রিলেটেড ফ্যাক্টরের কারণে, তাই অন্যের রক্ত নেওয়া থেকে বা একাধিক ব্লাড ট্রান্সফিউশন থেকে যতটুকু সম্ভব বিরত থাকার চেষ্টা করা উচিত.

আরেকটা বিষয় মনে রাখা দরকার রক্ত বাড়ার হরমোন ইনজেকশন বা আয়রন নিলেই যে সাথে সাথে রক্ত বাড়বে তা কিন্তু নয় যেহেতু এগুলো হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কিছুটা সময় নেয় তাই ইমার্জেন্সি ভাবে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে রক্ত নেওয়া ছাড়া উপায় থাকেনা তাই সিকেডি/Dialysis সবসময় আয়রন প্রোফাইল ব্লাড টেস্ট নিয়মিত চেক করে আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে তাৎক্ষণিক রক্ত নেওয়ার প্রয়োজনীতা কমে যায় এবং ভবিষৎ ট্রান্সপ্লান্ট করার ক্ষেত্রে ঝামেলা অনেকাংশে কমে যায়। আবার অনেকের সঠিক পরিমান বা মাত্রায় Erythropoietin কেনার সামর্থ না থাকলে ডাক্তারের Blood ট্রান্সফিউশন ছাড়া যাওয়ার উপায় থাকে না।

Dialysis এর সময় আপনার দুর্বলতা কাজ করবে এটা মানসিক,আর্থিক,শারীরিক বিভিন্ন কারণে হতে পারে অথবা সম্মিলিত ভাবে হতে পারে যার কারণে আপনি Depression এ ভুগবেন এটাই স্বাভাবিক এবং আপনার মন মানসিকতা দুর্বল করে দিবে ,তাই মানসিক ভাবে শক্ত থাকার কোনো বিকল্প নাই,মনে রাখবেন ডায়ালাইসিস একটা জীবন রক্ষাকারী আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা,চিন্তা করুন এই ব্যবস্থা না থাকলে কি হতো,একে ভীতি হিসেবে নিবেন না.

মানসিক এবং আর্থিক দুর্বলতার জন্য আপনার family সাপোর্ট খুব দরকার। যে Family যত বেশি Supportive সেই ফ্যামিলি এর kidney রোগীর লাইফ এক্সপেক্টন্সি তত বেশি।

Dialysis রোগীর শ্বাস কষ্টের জন্য পালস অক্সিমিটার দিয়ে রোগীর শরীর এ অক্সিজেন মাপা এবং সেই অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ ,নেবুলাইজার এবং যারা শ্বাস কষ্টের রোগী অর্থাৎ হাঁপানি আছে তাদের সবসমই ইনহেলার রাখা উচিত। নেবুলাইজার এর ওষুধ মেশানোর জন্য ডাক্তার এর তত্ত্বাবধায়ন দরকার এবং তাতে উপকার পাবেন।

অধিকাংশ dialysis রোগী ভাবে dialysis করলে আর কোনো কাজ করা যায় না কিন্তু পৃথিবীর উন্নত দেশে নিজে ৪০ কিলোমিটার ড্রাইভ করে dialysis করতে যায় এবং Office করে ৮ ঘন্টার বেশি আবার বাসায় এসে পরিবারকেও সময় দেয়।সুতরাং dialysis এর পর একটিভ থাকা জরুরি যার জন্য Exercise করা দরকার যেমন হাঁটা,যোগ ব্যায়াম.

আমি একটি dialysis ইউনিট এ দেখেছিলাম এক পাশে dialysis হচ্ছে আরেক পাশে যোগ ব্যায়াম করছে এবং breathing exercise ও করছে।

Dialysis যেখানে করবেন সেখানে ICU সাপোর্ট সহ high dependency ইউনিট, SLED(sustained low efficiency dialysis) এবং CRRT (continues renal replacement therapy ) এর ব্যবস্থা থাকা ভালো যারা ক্রিটিকাল রোগী তাদের জন্য,যাতে কোনো মেজর সমস্যা হলে অথবা বয়স্ক রোগীদের অথবা অন্যান্য complications সহ যারা dialysis করে তাদের জন্য দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহণ করে যায় |

এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অনেকবছর dialysis করে বেঁচে থাকা সম্ভব।

সবাই ভালো থাকুন ।

ⒸBKPA

Caution:
BKPA is a voluntary social organization whose mission is to raise awareness, promote and share knowledge about kidney disease. BKPA does not provide any kind of medical advice directly or indirectly through social media or any other platform which should only be done by the nephrologist or registered doctor. This is prohibited to take any kind of medical treatment based on the information provided by BKPA.
সতর্কতাঃ
বিকেপিএ একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন যার লক্ষ্য কিডনি রোগ সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি,প্রচার এবং সতর্ক করা। বিকেপিএতে সামাজিক মাধ্যম অথবা অন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করে বা সরাসরি প্রত্যক্ষ / পরোক্ষভাবে কোনো প্রকার চিকিৎসা সংক্রান্ত সেবা বা পরামর্শ প্রদান করা হয় না যা শুধুমাত্র আপনার নেফ্রোলজিস্ট এবং রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের এখতিয়ার।বিকেপিএ প্রদত্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোন প্রকার চিকিৎসা গ্রহণ নিষিদ্ধ।