কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট/প্রতিস্থাপনের আদ্যোপান্ত-
কিডনী প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে সহজ ভাষায় প্রশ্ন ও উত্তর আকারে দেওয়ার চেষ্টা করেছি যাতে সবার বুঝতে সুবিধা হয়। সবাই ভালো করে পড়লে ধারণা পাবেন আশা রাখি।
১। প্রশ্ন-কিডনি প্রতিস্থাপন কি?
উত্তর -কিডনি প্রতিস্থাপন মানে হচ্ছে আপনার নিজের কিডনি যখন অসুস্থতার কারনে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে কার্যক্ষমতা হারাবে তখন অন্য আরেকজন সুস্থ ব্যাক্তির কিডনী সার্জারি/অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে অপসারণ করে আপনার শরীরে প্রতিস্থাপন করানো হবে যাতে আপনার নিজের কিডনি সুস্থ থাকা অবস্থায় যেভাবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতো সে অনুযায়ী কাজ করে এবং আপনাকে সুস্থ রাখে।
২।কিডনি প্রতিস্থাপন কিভাবে করে এবং কে করে?
উত্তর-কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য আপনাকে যে কিডনি দিবে বা দাতা,প্রথমে তাকে অস্ত্ৰোপচার এর জন্য নেওয়া হবে এবং তার একটি কিডনি অপসারণ করে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সংরক্ষন করা হবে, এরই মধ্যে বা একই সাথে বা অল্প কিছু পর গ্রহীতার শরীরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দ্রুত বসানো বা প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব প্রতিস্থাপিত করা হয় ততই ভালো কারণ কিডনি ডোনারের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করার পর যদিও স্টেরেইল বরফে বিশেষ উপায়ে সংরক্ষিত করা হয় তারপরেও বিচ্ছিন্ন করার পর কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া শুরু করে।**সাধারণত দুইটি আলাদা অপারেশন থিয়েটার এ এই অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে এবং অনেক কিছু মেইনটেইন করে এই অস্ত্রোপচার করতে হয় সুতরাং যারা বলে কিডনি চুরি হয়ে গেছে বা ডাক্তার খুলে পকেটে কিডনি নিয়ে গেছে এগুলো হাস্যকর। এই অপারেশন একজন Urologist or Transplant Surgeon করে থাকেন।
৩।কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বা প্রতিস্থাপন এর অস্ত্রোপচার এর সময় কতক্ষন লাগে?
উত্তর-এটা সাধারণত তিন ঘন্টা থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগতে পারে। ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন কতটা অভিজ্ঞ,রোগীর অন্নান্য জটিলতা কেমন,অনেক কিছু নির্ভর করে কত দ্রুত অপারেশন হবে।
আজকাল ট্রান্সপ্লান্ট অপারেশন অনেকটাই সহজ হয়ে গেসে যা নিয়মিত হচ্ছে। মানুষ ট্রান্সপ্লান্ট এর নাম শুনলে আগে ভয় পেতো আর এখন আধুনিক অস্ত্রোপচার ব্যবস্থা ,আধুনিক rejection প্রতিরোধক মেডিকেশন এর জন্য প্রতিস্থাপন অনেক সহজ হয়ে গেসে।
৪।কিডনি প্রতিস্থাপন অপারেশন এর ব্যাথা কেমন?
উত্তর-অন্নান্য অপারেশন এর মতোই ব্যাথা ।
তবে পাঁচ সাত দিন পেটে এবং জেনিটাল অর্গানে নল লাগান থাকে ফ্লুইড এবং urine বের হওয়ার জন্য এর কারণে নড়তে পারবেন না তেমন,এখানে আপনার ধৈর্য পরীক্ষা দিতে হবে
৫।কিডনি প্রতিস্থাপনে জটিলতা কি কি?
উত্তর- কিডনি প্রতিস্থাপনে জটিলতা নিম্নরূপ -
কিডনি ডোনার প্রাপ্তি —– প্রধান সমস্যা কিডনি ডোনার পাওয়া। একটা কিডনি পাওয়ার জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হবে এবং ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল কারণ কিডনি ম্যাচিং সহো প্রতিটা দেশের অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট আইন অনুসরণ করা, ডোনার ফিটনেস ইত্যাদি বেশ কিছু ব্যাপার জড়িত যা আপনাকে ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করে আগাতে হবে।উন্নত দেশ সহ পৃথিবীতে অনেক আগে থেকে ক্যাডাভার(যারা ব্রেন ডেথ,তাদের কিডনি খুলে আপনাকে লাগিয়ে দিবে) ট্রান্সপ্লান্ট প্রচলিত আছে,সবাই যদি আমরা সচেতন হই তাহলে কিডনির যে চাহিদা তার অনেকাংশে পূর্ণ করা সম্ভব।বাংলাদেশেও ক্যাডাভার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট শুরু হয়েছে,কিন্তু লাইভ ডোনার ট্রান্সপ্লান্ট এর চেয়ে ক্যাডাভার ট্রান্সপ্লান্ট এ সাকসেস এবং স্থায়িত্ব কিছুটা কম।
আর্টিফিশিয়াল কিডনি ট্রায়াল হওয়ার কথা,মার্কেট সেটা এ আসলে (যদি FDA approval পায় )এবং দাম সবার সাধ্যের মধ্যে থাকে তাহলে এটা একটা অনেক বড় আর্শীবাদ হবে কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ রোগীদের জন্য।
কিডনি ম্যাচিং কি?
ডোনার কতটুকু ফিট থাকলে কিডনি দিতে পারবে এবং গ্রহীতা কখন নিতে পারবে?
আপনি অন্যের কিডনি গ্রহণ করার পূর্বে ডোনারের সাথে আপনার কিডনী কতটুকু ম্যাচ করেছে বা কিডনী দেওয়ার জন্য তার শরীর ফিট কিনা সেটা জানার জন্য ডোনারকে বেশ কিছু টেস্টের মাধ্যমে যেতে হয় যা নিচে দেওয়া হলো, মনে রাখবেন এই টেস্টগুলো নেফ্রোলজিস্ট অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে করে থাকেন কারণ রেসিপিএনটের বা গ্রহীতার জন্য কিডনী দাতা যেন কোনো ধরণের ক্ষতিগ্রস্থ না হন সেটি নেফ্রোলজিস্টদের প্রধান বিবেচনায় থাকে।
ডোনার এর fitness চেক করার জন্য যেসব test করতে হয় :-
১ম ধাপঃ
1.ABO blood grouping & Rh typing
2.CBC
3.Serum Creatinine with eGFR
4.Serum Urea
5.Serum Uric acid
6.Serum Electrolyte
7.FBS/RBS/HbA1C
8.Fasting lipid profile
9.BT; CT; PT with INR; APTT
10.LFT: Serum bilirubin
Serum albumin
SGPT
SGOT
11:Hormon analysis: TSH
FT3
FT4
12.Viral markar: HBsAg
Anti HCV
Anti HIV 1 & 2
Anti CMV IgG
Anti CMV IgM
13.Urine R/E
14.Urine C/S
15.24 hour UTP
16.CCR
17.USG of KUB with special attention to renal
vessels
18.Plain Xray KUB
19.Chest Xray P/A view
20.ECG
21.Echocardiogram
22.MT/Anti TB IgG & Anti TB IgM
23.VDRL & TPHA
১ম ধাপের সব রিপোর্ট ডাক্তার চেক করার পর ডোনার accept বা reject হতে পারে।এছাড়াও রিপোর্ট এর ভিত্তিতে ডোনারের কোন সমস্যা যদি চিকিৎসাযোগ্য হয় তাহলে সেটার জন্য মেডিসিন দেয়া হবে।এরপর ডোনার সম্পুর্ন সুস্থ হলে তাকে accept করা হবে।
এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতাল এবং বিভিন্ন ডাক্তারের মতামত অনুযায়ী ১ম ধাপের ২/১ টা টেস্ট কম বেশি হতে পারে।
২য় ধাপঃ
1.HLA Typing
2.T & B cell crossmatching
৩য় ধাপঃ
1.Renal CT angiogram
2.DTPA Renogram/DTPA Renal Scintigraphy
৪র্থ ধাপ(সর্বশেষ ধাপ)ঃ
অপারেশনের Fitness এর জন্য ডোনারকে কয়েকজন স্পেশালাইজড ডাক্তার দেখবেন।সেসব জায়গা থেকে কিছু সম্ভাব্য টেস্ট আসতে পারে যেমন ঃ
Urology:যে ডাক্তার ডোনারের অপারেশন করবেন তিনি সব রিপোর্ট দেখে ডোনেশনের জন্য সম্ভাব্য কিডনি ঠিক করবেন (সাধারনত বাম কিডনি)
Cardiology:এখান থেকে সবচেয়ে বেশি যে টেস্টটা দেয়া হয় তা হল 24 hour holter monitor
Anaesthesiology: ডোনার অজ্ঞান করার জন্য ফিট কিনা তা চেক করা হবে।
Gynaecologyঃ female ডোনার হলে এটা প্রযোজ্য। এখান থেকে দেয়া হতে পারে urine for PT; PAPS Smear এই টেস্টগুলো।
*যারা বাংলাদেশে ট্রান্সপ্লান্ট করাতে চান তারা ১ম ধাপ থেকেই সব টেস্ট যে হাসপাতালে অপারেশন করাবেন সেখানের লিস্ট এবং নিয়ম অনুযায়ী করাবেন।
*যারা ইন্ডিয়াতে ট্রান্সপ্লান্ট করাতে চান তারা ১ম,২য় ও ৩য় ধাপের টেস্টগুলো বাংলাদেশ থেকে করে নেবেন।এই টেস্টগুলো ডোনারের প্রাথমিক fitness নিশ্চিত করবে।
*ইন্ডিয়াতে টেস্টগুলো repeat করানো হবে। ৪র্থ/শেষ ধাপ শুধুমাত্র ইন্ডিয়াতে করানো হবে;বাংলাদেশে করানোর প্রয়োজন নাই।
অপারেশনের তারিখ নির্ধারিত হওয়ার পর অপারেশনের আগের ৭২ ঘন্টার মধ্যে T & B cell/ tissue crossmatching আবার করা হবে।এছাড়া অপারেশনের আগেরদিন রাতে বা ভোরে PT With INR রিপিট করানো হবে।
উপরোক্ত টেস্টগুলো কমপ্লিট হলে নেফ্রোলজিস্ট সিদ্ধান্ত নিবেন আপনি ডোনার হিসেবে ফিট কিনা।( টেস্ট এর অংশগুলো জোনাকি আপুর পোস্ট থেকে নেওয়া এজন্য ধন্যবাদ তাকে Jonaki Rizwana)
HLA ম্যাচিং যতটা ভালো হবে তত ভালো এবং এই ম্যাচিং সাধারণত পরিবারের মধ্যে থেকে কিডনি নিলে বেশি মেলে,distance রিলেটিভ এর মধ্যে থেকে নিলে মেলার চান্স কম থাকে,তবে এখন আধুনিক ইম্মুনোসাপ্রেসিভ ঔষধ এর জন্য ডাক্তার hla নিয়ে চিন্তিত হন না অনেক সময় hla করেও না,যেহেতু কিডনি পাওয়াটাই দুর্লভ সেখানে hla ম্যাচিং এর জন্য তারা রোগীকে ফেরাতে চান না।
T & B cell cross match-এটা মেলাটা জরুরি সাকসেসফুল transplant এর জন্য,এটা না মিললে এবং ডোনার যদি না থাকে তখন আপনাকে বেশ কিছু পরীক্ষা করে,Plasmapheresis (বিশেষ এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ডোনার এর এন্টিবডি মুছে ফেলা হয়) চিকিৎসার মাধ্যমে আপনাকে ডোনার এর কিডনি যাতে গ্রহণ করে সে ব্যবস্থা করা হবে।
যারা ভবিষ্যৎ বা নিকট ভবিষ্যতে ট্রান্সপ্লান্ট করবেন বা করতে চাচ্ছেন তারা ব্লাড ট্রান্সফিউশন বা রক্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন। আসলে রক্ত নেওয়া ইমার্জেন্সি হলে বা তাৎক্ষণিক দরকার হলে তো আর কিছু করার নাই, নিতেই হবে তবে প্রথম থেকে যদি এলার্ট হয়ে রক্তের হরমোন ইনজেকশন(Erythropoetin) সঠিক মাত্রায় নেন এবং আইরন suppliment ইনজেকশন আকারে নেন বা খান তখন রক্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা কমে যায় কারণ রক্ত নিলে ক্রসম্যাচ/ম্যাচিং এ ঝামেলা হওয়ার পসিবিলিটি বেড়ে যায় ইমিউনোলজিকাল ও এন্টিবডি রিলেটেড ফ্যাক্টরের কারণে, তাই অন্যের রক্ত নেওয়া থেকে বা একাধিক ব্লাড ট্রান্সফিউশন থেকে যতটুকু সম্ভব বিরত থাকার চেষ্টা করা উচিত।
আরেকটা বিষয় মনে রাখা দরকার রক্ত বাড়ার হরমোন ইনজেকশন বা আয়রন নিলেই যে সাথে সাথে রক্ত বাড়বে তা কিন্তু নয় যেহেতু এগুলো হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সময় নেয় তাই ইমার্জেন্সি ভাবে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে রক্ত নেওয়া ছাড়া উপায় থাকেনা তাই সিকেডি রোগীরা সবসময় আয়রন প্রোফাইল ব্লাড টেস্ট নিয়মিত চেক করে আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে তাৎক্ষণিক রক্ত নেওয়ার প্রয়োজনীতা কমে যায় এবং ভবিষৎ ট্রান্সপ্লান্ট করার ক্ষেত্রে ঝামেলা অনেকাংশে কমে যায়।
রক্তের গ্রুপ ডোনার এর সাথে গ্রহীতার না মিললেও Plasmapheresis করা হয়ে থাকে।এগুলোকে ABO INCOMPATIBLE ট্রান্সপ্লান্ট বলে,আধুনিক বিশ্বে ABO transplant successful নরমাল ট্রান্সপ্লান্ট এর মতোই অনেকটা।
এই ধরণের ট্রান্সপ্লান্ট এর জন্য ভালো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিট এবং অভিজ্ঞ ট্রান্সপ্লান্ট নেফ্রোলজিস্ট দরকার হয় কারণ রিজেকশনের চান্স ব্লাড কম্পাটিবল ট্রান্সপ্লান্টের চেয়ে বেশি থাকায় বার বার টেস্ট এবং ট্রান্সপ্লান্ট নেফ্রোলজিস্টের ক্লোজ মনিটরে থাকতে হয়। ভালো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিট এবং অভিজ্ঞ ট্রান্সপ্লান্ট নেফ্রোলজিস্ট অথবা আপনার আর্থিক সামর্থ না থাকলে এধরণের ট্রান্সপ্ল্যান্টে ঝুঁকি বা রিজেকশনের রিস্ক বেশি থাকে।
কে কোন রক্তের গ্রুপ এর কিডনি সাধারণত নিতে পারবেন বা দিতে পারবেন এ ব্যাপারে জানতে নিচের লিংকটি দেখুন :-
https://bkpa.net/blood-group-transplant/
DTPA রেনোগ্রাম-এই টেস্ট টা গুরুত্বপূর্ণ ,আপনার কিডনি যত ভালোই কাজ করুক না কেন,এই টেস্ট এর মাধ্যমে ডোনার এর দুইটি কিডনি এর মধ্যে কোন কিডনি কতটুকু কাজ করছে সেটা জানার জন্য এই টেস্ট করা হয়।
**** উদহারণ** -যেমন আপনার ডোনার এর একটা কিডনি কাজ করছে ৮০ ভাগ আরেকটা কিডনি কাজ করছে 20 ভাগ সেখানে ডোনার এর কিডনি নিবে না কারণ ডোনার এর যে কিডনি শক্তিশালী সেটা ডোনার এর জন্য রেখে দিবে আর যেটা কম কাজ করে সেটা আপনাকে দিবে ,২০ ভাগ কাজ করা কিডনি ডাক্তার আপনাকে দিতে সম্মত হবে না।সাধারণত দুইটা কিডনি সমানভাবে কাজ করতে হবে অথবা ১৯ থেকে ২০ হলে ডাক্তার এলাও করতে পারে,যেমন আমার ডোনার এর যেটা দুর্বল সেটাও ৪৮ ভাগ কাজ করতো ৫০ এর মধ্যে,এজন্য DTPA টেস্ট বাংলাদেশ থেকে করে যাওয়া ভালো এবং অভিজ্ঞ Nephrologist এর ওপিনিয়ন নেওয়ার পর যারা দেশের বাহিরে ট্রান্সপ্লান্ট করবে তাদের যাওয়া উচিত,তাহলে ওখানে যাওয়ার পর ডোনার রিজেক্ট হওয়ার চান্স কম।
কিডনি প্রতিস্থাপনের সময় এবং পরে আমাকে কি ওষুধ খেতে হবে,এটা কতদিন?
উত্তর-কিডনি যখন আপনি কারো কাছ থেকে নিতে চাবেন,তার মানেই হলো এটা আরেকজনের জিনিস,আল্লাহ প্রদত্ত আপনার নিজের না।সুতরাং সেটা খুব সাধারণভাবেই আপনার শরীর মানতে চাবে না এবং আপনার শরীর এর ইমিউনিটি সিস্টেম ওটাকে আক্রমণ করবে এবং ওটাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করবে,এজন্য আপনাকে আপনার ইমিউন সিস্টেম যাতে অন্যের দেওয়া কিডনিকে নষ্ট করতে না পারে সেজন্য আপনাকে আপনার ইমিউন সিস্টেম কে দমিত রাখার জন্য immunosuppressive ঔষুধ খাইতে হবে।
এই Immunosuppressive ঔষুধ সাধারণত দুই ধরণের-
💊 ১। Induction drug -এটা অনেক শক্তিশালী এন্টিরিজেকশন ড্রাগ যা প্রতিস্থাপন অপারেশন এর সময় ব্যবহার করা হয় এগুলো এক বা একাধিকবার ব্যবহার করা হয়ে থাকে যাতে অপারেশন এর সময় বা পর পর Rejection এবং Hyperaccute রিজেকশন না হয়। Hyperaccute রিজেকশন হলো অপারেশন এর সময় রিজেকশন হওয়া ,যেটা ভয়াবহ যদিও এসব Induction ড্রাগ এর কারণে এখন খুবই কম Hyperaccute রিজেকশন হয়।
💊 ২। Maintainance immunosuppressive Drug -এই ড্রাগগুলো প্রতিস্থাপন এর পর দীর্ঘদিন বা সারাজীবন খেতে হয়,এইগুলো সাধারণত চার ধরণের হয় :-
🍁Calcineurin Inhibitors: Tacrolimus and Cyclosporine
🍁Antiproliferative agents: Mycophenolate Mofetil, Mycophenolate Sodium and Azathioprine
🍁mTOR inhibitor: Sirolimus, Everolimus etc.
🍁Steroids: Prednisone etc.
এই ড্রাগ গুলো নেফ্রোলজিস্ট সিদ্ধান্ত নিবে কোন ড্রাগ কত মাত্রায় আপনার জন্য ব্যবহার করবে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে।
উপরোক্ত ওষুধগুলোর বাহিরেও Antiviral ড্রাগ এবং আপনার সমস্যা অনুযায়ী ওষুধ ডাক্তার দিবে যেমন-আপনার blood pressure থাকলে তার জন্য ওষুধ অথবা diabetics থাকলে আলাদা তার জন্য ইত্যাদি ইত্যাদি।
🚩✅ ট্রান্সপ্লান্ট পরবর্তী Rejection কি এবং Rejection ঠেকানোর জন্য ডাক্তার কি কি চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে?🚩✅
উত্তর- আপনি যখন আপনার শরীরে অন্য কারোর অংশ জোরপূর্বক নিজের বানানোর চেষ্টা করবেন তখন সে তা মানতে চাবে না এবং প্রতিবাদ করা শুরু করবে,এই প্রতিবাদ যখন আন্দোলনে রূপ নিবে তখন আপনার শরীর থেকে সে বিচ্ছিন্ন হওয়ার চেষ্টা করবে এবং আপনাকে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করবে, এটাই রিজেকশন।
🪴রিজেকশন সাধারণত তিন ধরণের-🪴
১। Hyperaccute rejection - এই ধরণের রেজেকশন প্রতিস্থাপনের কিছু সময় বা কিছু মিনিট এর মধ্যেই হয়ে থাকে। যখন Antigen পুরোপুরি ম্যাচ না হয় তখন এই rejection হয়ে থাকে।
২। Accute rejection-এই ধরণের rejection সাধারণত অপারেশন এর পর,প্রথম সপ্তাহ থেকে তিন মাস এর মধ্যে বা সার্জারির বেশ কিছু মাস পরেও হতে পারে বা হয়ে থাকে.
৩। Chronic rejection-এই Rejection আস্তে আস্তে আগাইতে থাকে এবং বেশ কিছু বা অনেক বছর সময় নিতে পারে এবং ধীরে ধীরে Creatinine বাড়তে থাকে ।নিজের আসল রোগ যেমন :অটোইমিউন ডিসর্ডার,যার কারণে নিজের কিডনির ক্ষতি হয়েছিল তা আবার নতুন করে ফিরে আসলে/আক্রমণ করলে ক্রনিক rejection হয়ে থাকে,আবার ধীরে ধীরে এন্টিবডি ইফেক্ট এর জন্যও ক্রনিক রেজেকশন হতে পারে.
এছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে rejection হতে পারে যেমন -
🔸️ ব্লাড clot হলে,প্রতিস্থাপিত কিডনি রক্ত সাপ্লাই না পেলে
🔸️ ব্যাকটেরিয়াল বা ফাংগাল ইনফেকশন হলো কিন্তু ঠিকমতো চিকিৎসা নিলেন না বা গাফিলতি করলেন।
ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন কন্ট্রোল,কালচার এবং এন্টিবাযোটিক্স এর ব্যাপারে পড়তে নিচের *লিংকটি পড়ুন-
🔸️ভাইরাল ইনফেকশন - আগে থেকে অনেক রোগীর hepatitis যেমন-hepatitis B ,C থাকে সেটা নেগেটিভ না থাকলে বা ঠিক মতো কন্ট্রোল না থাকলে।
ট্রান্সপ্লান্ট এর পর BK , CMV দ্বারা আক্রান্ত হলেন কিন্তু সঠিক উপায়ে চিকিৎসা নিলেন না ইত্যাদি।
🔸️অনেক সময় ওষুধ এর সাইড ইফেক্ট এর কারণেও রেজেকশন আসতে পারে।
🔸️ওষুধ খেতে হেলাফেলা করা বা নির্দিষ্ট সময় মেইনটেইন না করা বা আর্থিক বা যেকোনো কারণেই হোক নির্দিষ্ট মাত্রা হতে ওষুধের ডোজ কম করে খাওয়া বা না খাওয়া।
তারপরেও রেজেকশন হলে সেটা নেফ্রোলজিস্ট নিজস্ব প্রাকটিস এবং এক্সপেরিয়েন্সেস এর মাধ্যমে biopsy করে ডিসিশন নিবেন কি ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নিবেন,একেক ট্রান্সপ্লান্ট রোগী একেকধরণের তাই decision ও ভিন্ন যেমন-
Methyl prednisolone steroid থেরাপি যেটা খুব কমন
এন্টিবডি রিমুভাল /neutralization :প্লাসমফেরেসিস , ইমামুনওয়ার্ডসর্প্শন,intravenous ইমিউনোগ্লোব্যুলিন
Anti B-Cell থেরাপিএস : Rituximab, IVIG
এন্টিপ্লাসমা সেল থেরাপি : Bortezomib.
Anti-T-cell থেরাপিএস : T-cell depleting agents যেমন- Antithymocyte globulin (ATG).
Terminal Compliment pathway ইনহিবিটর : Eculizumab
Rejection প্রতিরোধের উপায় ?
উত্তর- Rejection প্রতিরোধের ব্যাপারে নিজেকে খুব ভালো একজন অভিজ্ঞ ট্রান্সপ্লান্ট Nephrologist এর আন্ডারে থাকা এবং কঠিন ভাবে তার কথা শোনা। প্রতিনিয়ত চেকআপ
এ থাকা এবং নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা এবং কোনো ধরণের Abnormality দেখলে সাথে সাথে নেফ্রোলজিস্ট কে জানানো। ⚡⚡কারণ অল্প বা মাঝারি Creatinine বাড়লেও কোনো সিম্পটম বোঝা যায় না তাই ট্রান্সপ্লান্ট এর প্রথম দিকে প্রথম তিন মাসে নিজের ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিট এ সার্বক্ষণিক তীক্ষ্ণ নজরদারিতে থাকা উচিত,একদিন পরপর টেস্ট বা প্রতিদিন এবং আস্তে আস্তে Transplant কিডনি সেটল বা স্ট্যাবল হলে তিনদিন ,সাতদিন এভাবে সময় বাড়াবে নেফ্রোলজিস্ট এবং দেশে চলে আসলেও দেশের ট্রান্সপ্লান্ট নেফ্রোলজিস্ট এর পাশাপাশি সার্বক্ষণিক নিজের ট্রান্সপ্লান্ট নেফ্রোলজিস্ট কেও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ব্লাড টেস্ট এর মাধ্যমে জানানো উচিত এবং কিডনি stable হওয়ার একমাস পর পর ব্লাড টেস্ট করা উচিত,মনে রাখবেন ট্রান্সপ্লান্ট এর পর নিয়মিত ঘনঘন টেস্ট করা উচিত সারাজীবন কারণ অল্প creatinine বাড়লেও বোঝা যায় না বা শারীরিক কোনো ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় না।
প্রথম এক বছর প্রতিনিয়ত বিভিন্ন টেস্ট Observation এ থাকা উচিত যেমন-tacrolimus টেস্ট করে সে অনুযায়ী Dosage অ্যাডজাস্টমেন্ট করা,ক্রিয়েটিনিন,ইউরিয়া,ইউরিনারি টোটাল প্রোটিন চেক করা,urine rme করা,Cbc করা, Lipid প্রোফাইল চেক করা,BK CMV VIRUS করা,HBA1C,electrolytes,ভিটামিন D এবং calcium লেভেল চেক করা,TB টেস্ট ইত্যাদি করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
⚘⚘Rejection বোঝার উপায় কি এবং বুঝতে কি ধরণের টেস্ট করবো?
উত্তর- কোনো ধরণের abnormality শরীর বুঝলেই ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে দেখেন,তা যদি বেশ কিছুটা বাড়তি এবং সেটা যদি বাড়তেই থাকে তাহলে বুঝতে হবে Rejection হওয়া শুরু হয়েছে বা হতে পারে। এছাড়াও শারীরিক উপসর্গের মধ্যে রয়েছে - দুই একদিন এর মধ্যে দুই অথবা তিন কেজি ওজন বৃদ্ধি পাওয়া,জ্বর,অপারেশন এর জায়গায় ব্যাথা হওয়া,Urine আউটপুট কমে যাওয়া ইত্যাদিও Rejection এর সিম্পটম এর মধ্যে অন্যতম।
🌱Biopsy :-Rejection বোঝার অন্যতম পরীক্ষা হচ্ছে biopsy ,
লম্বা একটা শুই এর মাধমে kidney থেকে tissue নেওয়ার পর তা টেস্ট করা হয় যে কি কারণে creatinine বাড়ছে এবং rejection এর কারণ কি?ভয় এর কারণ নাই,
এটা করার সময় লোকাল এনেস্থেসিয়া দেওয়া হয় এজন্য ব্যাথা পাওয়া যায় না।
🌱DSA (DONOR’S SPECIFIC ANTIBODY) / PRA (panel reactive antibody) :- ট্রান্সপ্লান্ট এর পর Recepient এর শরীরে কোনো এন্টিবডি তৈরী হয়েছে কিনা বা এন্টিবডির যে প্যানেল/লিস্ট আছে তা থেকে রিএক্টিভ বা সক্রিয় হয়ে গ্র্যাফ্ট এ দ্রুত বা ধীরে ধীরে এটাক করছে কিনা বা কি পরিমান সক্রিয় হচ্ছে তা বোঝার জন্য এই টেস্ট দিয়ে থাকে,এই ব্লাড টেস্ট দিয়েও Antibody Rejection এর বিষয় ধারণা পাওয়া যায় এবং নেফ্রোলজিস্ট সে অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
♨️ একটি জিনিস সব সময় মনে রাখবেন কিডনি প্রতিস্থাপন একটি টোটাল প্যাকেজ যা কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে হয়ে থাকে এখানে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভালো ট্রান্সপ্লান্ট নেফ্রোলজিস্ট আরো বেশি গুরুত্বপর্ণ যার তত্ত্বাবধায়নে আপনাকে সবসময় সারাজীবন থাকতে হবে এবং ট্রান্সপ্লান্ট পরবর্তী চেকাপ বা ফলোআপ এর জন্য এবং দ্রুত রিজেকশন প্রতিরোধে এবং সঠিক তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণে তার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
🍭 Post Renal Transplant Lifestyle / ট্রান্সপ্লান্টের পর ইন্সট্রাকশন্স বা জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কি কি নিয়ম মেনে চলবো ?
ভালো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটগুলো লাইফস্টাইল এর ব্যাপারে এবং খাবার এর ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে এবং প্রয়োজনে একজন Dietician এর পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
🎉*খেয়াল রাখবেন ট্রান্সপ্লান্ট এর পর তাৎক্ষণিক বাসায় রান্না করা গরম খাবার খাবেন যেটা সর্বোত্তম। বাসি খাবার বা অতিরিক্ত মসলা এবং ঝাল খাবার পরিহার করবেন। যেসব খাবার ইম্মুনোসাপ্রেসিভ মেডিসিন এর সাথে সাংঘর্ষিক যেমন জাম্বুরা বা গ্রেপফ্রুইট ,আনার,কাঁচা রসুন ইত্যাদি পরিহার করা উচিত। লো সল্ট ডায়েট ফলো করুন,প্যাকেট জাতীয় বা কোলা ড্রিঙ্কস বা কার্বনেট পানিও নিষিদ্ধ। সালাত বা কাঁচা ফলমূল প্রথম তিনমাস সাবধানে ভালো করে ধুয়ে খাবেন বা এভোয়েড করতে পারেন। হাই কোলেস্টরেল ফুড যেমন -চিংড়ি রেড মিট, অর্গান মিট যেমন মগজ,কিডনির মাংস ইত্যাদি খাবেন না বা খেলেও খুব অল্প পরিমান অকেশনালী। এছাড়া পরিমিত সব খেতে পারবেন কারণ ট্রান্সপ্লান্ট এর পর রেস্ট্রিকশন্স উঠিয়ে নেওয়া হয় যদি রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট এর পর ইলেক্ট্রোলাইটস ঠিক থাকে।
🎉*পরিষ্কার ফুটানো বা রিভার্স অসমোসিস ফিল্টার পানি পান করবেন,সবসময় মাস্ক ব্যবহার এবং হ্যান্ড হাইজিন মেইনটেইন করবেন। পাবলিক প্লেস যেমন বাজার,মেলা ইত্যাদি জায়গা খুব প্রয়োজ্ন ছাড়া যাওয়া উচিত নয় বা এভোইড করবেন।
🎉*ট্রান্সপ্লান্ট এর পর যে মেইনটেনেন্স ইম্মুনোসাপ্রেসিভ খেতে হয় যেমন : ট্যাক্রোলিমাস,মাইকোফেনলেট,স্টেরোয়েড ইত্যাদি সেগুলা নিয়ম তো সঠিক সময়ে খাওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ডোজ একটুও এদিক ওদিক করা যাবে না।
🎉*বিছানার চাদর তিনদিন/পাঁচ দিন পরপর চেঞ্জ করবেন। নিজের তোয়ালে,গামছা,রুমাল প্রত্যহ পরিষ্কার করা এবং নিজের পরিধেয় কাপড় বাহির থেকে এসে নিয়মিত ধোয়া উচিত।
🎉*বাসায় নিজের রুমের দরজার সামনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং মাস্ক রাখা এবং প্রথম তিনমাস আলাদারুমে আইসোলেশনে থাকা এবং চেষ্টা করা ভিজিটর/দর্শনার্থীদের খুব প্রয়োজন না হলে দেখা না করে ফোনে কথা বলা।
🎉*ওয়াশরুম নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এবং রুমেরসাথে এটাস্ট হওয়াটা প্রয়োজনীয়, একই ওয়াশরুম একাধিক ব্যাক্তি ব্যবহার করলে তা সঠিকভাবে পরিষ্কার বা ডিজইনফেক্ট না করে ব্যবহার করা উচিত নয়।
🎉* নিজের কেয়ার গিভার বা যে দেখাশোনা করবেন বা দায়িত্বে থাকবেন তিনিও যাতে পরিষ্কার পরিছন্ন থাকে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া।
🎉*নিজের পরিধেয় কাপড় বা তোয়ালে বা দাড়ি শেভ করার রেজার,ট্রিমার কখনো আরেকজনকে বা আরেকজনেরটা নিজের ব্যবহার করতে দেওয়া বা করা উচিত নয়।
🎉*ঢাকা শহরে প্রচুর পলুশন এবং বাতাসে দূষণ অনেক বেশি বা আপনি যদি পলুটেড এরিয়াতে বাস করেন তাহলে বাসাতে এয়ার পিউরিফায়ার/হেপা ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন যা একটি নির্দিষ্ট জায়গার বা আয়তনে দূষিত বাতাস টেনে নিয়ে পরিষ্কার করে রুমে ছড়ায়,সেগুলো বিভিন্ন কোম্পানি বানায়।
🎉*ট্রান্সপ্লান্ট এর পর স্টেরয়েড বা প্রেডনিসোলোন চলে বা চালাতে হয় যা হাড় বা বন ডিজিজ হওয়ার পসিবিলিটি অনেক বাড়িয়ে দেয় তাই ট্রান্সপ্লান্ট এর নিয়মিত বা বছরে কমপক্ষে একবার বন বা হাড়ের চেকাপ করা জরুরি তাই ব্লাড ক্যালসিয়াম ,ভিটামিন ডি লেভেল টেস্ট করে সে অনুযায়ি ব্যাবস্থা নেওয়া এর সাথে সাথে বন মিনারেল ডেন্সিটি টেস্ট করে দেখা উচিত হাড়গুলোর বর্তমান কি অবস্থা বা ভবিষ্যতে অস্টিওপরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু এবং সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়া.
বন বা মিনারেল ডিজিজ সম্পর্কে নিচের লিংকটি পড়তে পারেন:-
কিডনি এবং বন মিনারেল ডিজিজ/হাড্ডির রোগ- Kidney and Bone mineral Diseases
🎉*ট্রান্সপ্লান্ট এর পড় ব্লাডপ্রেশার অনেকের ক্ষেত্রেই কমন তাই নিয়মিত চেকাপ/মনিটর এবং বাড়তি থাকলে সে অনুযায়ি ওষুধগ্রহন এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে,অসংখ রিসার্চ বলে ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে কিডনি গ্র্যাফ্ট survival কমে যায়।
🎉*ট্রান্সপ্লান্ট পার্সনদের খাবারের ব্যাপারে কিছু রেস্ট্রিকশন্স ছাড়া সব স্বাভাবিক থাকে। কিছু রেস্ট্রিকশন্স এর মূল কারণ হচ্ছে সাধারণ সুস্থ মানুষের কিডনি দুইটাই একটিভ কিন্তু আমাদের একটা এবং তাও অন্যের, তাই চাপ কম ফেলানোই ভালো তাতে ট্রান্সপ্লান্ট কিডনির দীর্ঘস্থায়িত্ব বাড়ে বা বেশি হয় । 💢 সত্যি কথা বলতে পোস্ট ট্রান্সপ্লান্টের পর steroid/Tacrolimus/Mycophenolate ইত্যাদি যে ইম্মুনোসাপ্রেসিভ ড্রাগগুলো খাওয়া হয় সেটা লাইফ সেভিং ড্র্যাগ কিন্তু এই ড্রাগ এর সাইড এফেক্টের কারণে সুগার বেড়ে যায় যেহেতু steroid,Tacrolimus,Mycophenolate etc প্রথমদিকে ড্র্যাগ বেশি মাত্রায় চলে তাই এই ইম্মুনোসাপ্রেসিভ ওষুধগুলোর কারণে যার কখনো ডায়াবেটিকস ছিল না বা বাড়তি সুগার ছিলোনা তারও ডায়াবেটিকস হয়ে যায় যাকে ড্র্যাগ induced বা ওষুধের কারণে বেড়ে যাওয়া ডায়াবেটিকস বলে যা হুট্ করে জাম্প করতে পারে তাই সুগার জাতীয় খাবার এ রেস্ট্রিকশন আনা উচিত, আরেকটা কথা আমরা যে কার্বস জাতীয় খাবার খাই যেমন ভাত, রুটি ইত্যাদি এগুলো কিন্তু সুগারেই শেষ পর্যন্ত রূপান্তরিত হয়ে যায় তাই সুগার এর সাথে সাথে কার্বোহাইড্রেট জাতীয়ও খাবার কম বা সামান্য খাওয়া উচিত ।
🔆ব্লাড সুগারের ব্যাপারে নিচের লিংকটি পড়তে পারেন :-
**আরেকটা সমস্যা হচ্ছে ইম্মুনোসাপ্রেসিভ বিশেষ করে স্টেরোয়েড/prednisolone এর কারণে লিপিডও বেড়ে যায় তাই চর্বি এবং তৈলাক্ত জাতীয় খাবারের ব্যাপারে সতর্কতা মেনে চলা উচিত বা একেবারে কম খাওয়া উচিত।
🔆 লিপিডের ব্যাপারে নিচের লিংকটি পড়তে পারেন :-
🎉*প্রোটিন স্বাভাবিক মাত্রায় খাওয়া উচিত ধরুন দুপুরে/রাতে এক পিছ মাঝারি সাইজ এর মাছ বা মাংস যেহেতু কিডনি ফাঙ্কশন স্বাভাবিক হয়ে যায় ট্রান্সপ্লান্টের পর.প্রোটিন এর ক্ষেত্রে চিকেন,মাছ,ডিমের সাদা অংশ ইত্যাদি বেশি প্রাধান্য দিবেন। রেড মিট এবং অর্গান মিট(কলিজা,গুর্দা ইত্যাদি) অল্প বা মাঝে মাঝে অকেশনালী খেতে পারেন যেহেতু রেড মিট এবং অর্গান মিট লিপিড/চর্বি এবং ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায় তাই নিয়মিত খাওয়া কখনো উচিত নয়।
🔆 ইউরিক অ্যাসিড সম্পর্কে জানতে নিচের লিংক পড়ুন :-
https://bkpa.net/uric-acid/
🎉*ট্রান্সপ্লান্ট এরপর আস্তে আস্তে অল্প অল্প করে হাটা শুরু করবেন যা সময়ের সাথে সাথে বাড়াবেন।
https://bkpa.net/walk-exercise/
🎉*ওজন স্ট্রীক্টলী মেইনটেইন করবেন ।
-——‐‐‐‐——-××××——————
🔸️🔸️বাংলাদেশে যারা ট্রান্সপ্লান্ট করতে চান এবং আইননানুগ বিষয়গুলো জানতে চান তারা নিচের লিংকটি পড়তে পারেন-
https://bkpa.net/transplant-law-legal-aspects/
🔸️🔸️কিডনি প্রতিস্থাপনে দালালদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এবং ঝামেলা নিয়ে নিচের পোস্টটি পড়তে পারেন:-
Preemptive Renal Transplant বা early ট্রান্সপ্লান্ট হচ্ছে ডায়ালাইসিস শুরু করার আগেই যখন আপনার কিডনি কিছুটা সুস্থ তখন ট্রান্সপ্লান্ট করা হয় বা করে ফেলা হয় এর মানে এই না যে আমি কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট এর আগে ডায়ালাইসিস করি নাই সুতরাং সেটাকে প্রিএম্পটিভ ট্রান্সপ্লান্ট বলা হবে যেমন ধরুন আপনার creatinine ৮ অথবা ৯ বা ১০ বা ১২ কিন্তু আপনার শরীর ফিট তাই ডাক্তার আপনাকে বললো ডায়ালাইসিস দরকার নাই আপনি ট্রান্সপ্লান্ট করে ফেলেন এবং করলেন, সেটা প্রিএম্পটিভ ট্রান্সপ্লান্ট হবে না। যদিও এই ধরণের creatinine এ ট্রান্সপ্লান্ট এর আগে দুই তিনটা বা আরো ডায়ালাইসিস দিয়ে নেয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাতে টক্সিসিটি কম থাকে এবং অপারেশন এ রিস্ক কমানোর জন্য।
🛎তাহলে কখন করতে হবে?
🎗সাধারণত ৪ বা ৪.৫ creatinine বা GFR ১৫ ,১৬,১৭ ইত্যাদি তখন নেফ্রোলজিস্টের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্তে আসা উচিত বা আপনার ট্রান্সপ্লান্ট নেফ্রোলজিস্ট এই ব্যাপারে ক্রনিক কিডনি রোগে তৃতীয় বা চতুর্থ স্টেজ বা আরো আগে থাকা অবস্থায় ডোনার এর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এবং নিকট ভবিষতের জন্য ঠিক করে রাখার কথা বলবে বা বলা উচিত বা সবচেয়ে উত্তম সময় কারণ এই প্ল্যানিং গুলো আগে থেকে করলে সবচেয়ে ভালো আর আপনি নিজেও আপনার ভবিষৎ সম্পর্কে জেনে গেছেন এবং হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিতে বা ম্যাচিং করতে গেলে বা ডোনার খুঁজতে গেলে বেশ সময় লাগতে পারে তখন ধরুন ছয়মাস বা এক বছর লেগে গেলো এবং creatinine আরো বেশ কিছুটা হাই হয়ে গেলো তখন আর তাকে প্রিএম্পটিভ ট্রান্সপ্লান্ট নাও বলা হতে পারে কারণ শেষ স্টেজ এর কাছাকাছি creatinine ধামাধাম বা দ্রুত বাড়তে থাকে সাধারণত অর্থাৎ ক্রিয়েটিনিন ২ থেকে ৪ creatinine হতে সময় হয়তোবা লাগতে পারে বেশ কয়েক বছর কিন্তু ৬ থেকে ৮ বা ১০ হতে সাধারণত অনেক কম সময় লাগে তাই এসব ক্ষেত্রে নিজে এবং পরিবার খুব সাপোর্টিভ এবং দূরদর্শী সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন।আরেকটা কথা এই জিনিসগুলো ট্রান্সপ্লান্ট নেফ্রোলজিস্ট থেকে নেফ্রোলজিস্ট এর সিধান্ত পরিবর্তিত হয় তাই সবচেয়ে ভালো যে ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটগুলো বা ট্রান্সপ্লান্ট নেফ্রোলজিস্ট আছে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা উচিত বা তাদের সান্নিধ্যে থাকা উচিত।
🛎উপকারিতা কি প্রিএম্পটিভ/preemptive ট্রান্সপ্ল্যান্টে?
🎗খরচ অনেকাংশে বেঁচে যায় কারণ প্রপার ডায়ালাইসিস বেশ এক্সপেন্সিভ এবং পরিপূর্ণ কিডনির সকল কাজ করতে পারেনা তাই ডায়ালাইসিস এ একটা শরীরে নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট থাকে কারণ ডায়ালাইসিস করলেও creatinine হাই থাকেই এবং অন্নান্য হরমোনাল কাজও করতে পারে না।
**ওভারঅল রিজেকশন(যেমন এন্টিবডি রিলেটেড)রেট বা চান্স কম থাকে. ডায়ালাইসিস এর সময় বা এন্ডস্টেজে বা ট্রান্সপ্ল্যান্টের সময় রক্ত নেওয়ার দরকার পরে বা চান্স বেশি থাকে যা প্রিএম্পটিভ ট্রান্সপ্লান্ট এর ক্ষেত্রে নিতে হয় না বা নেওয়ার চান্স অনেকাংশে কমে যায় কারণ কিডনি এবং কিডনি গ্রন্থি কিছুটা কাজ করার কারণে হিমোগ্লোবিন কম থাকলেও মোটামুটি ভালো থাকে বা চলে আর রক্ত নিতে হয় না দেখে তুলনামূলক রিজেকশন এর চান্স কম থাকে বা হয় না যদিও রিজেকশন এর চান্স সব ট্রান্সপ্লান্টে থাকে কিন্তু প্রিএম্পটিভ বা আর্লি ট্রান্সপ্লান্ট এর ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম থাকে একইসাথে ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারীজনিত রিস্ক কম হয়।
**এই ধরণের ট্রান্সপ্লান্ট এ সাকসেস রেট এবং ট্রান্সপ্লান্ট এর লংজিবিটি বা স্থায়িত্ব সাধারণত বেশি থাকে এবং কোয়ালিটি অফ লাইফ ভাল হয়।
ⒸBKPA